লন্ডনের সাইন্স মিউজিয়ামে একদিন

26/01/2015 00:42

সাইন্স মিউজিয়ামের মূল ভবন

 লন্ডনের সাইন্স মিউজিয়াম ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়ামের পাশেই। এখানে আরও একটি মিউজিয়াম আছে ভিক্টোরিয়া এন্ড আলবার্ট মিউজিয়াম।  South Kensington জায়গাটা দুতাবাস এলাকা। পাশাপাশি তিনটি মিউজিয়াম হওয়ায় এই এলাকাটিতে পর্যটকদের উপছে পড়া ভিড় লেগেই থাকে। বিশেষ করে South Kensington পাতাল রেলওয়ে ষ্টেশনে। 

এই এলাকাটি আমার কাছে খুব পরিচিত। কারন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দুতাবাসে আসা হয়েছে। সেই সাথে ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়াম আমার খুব পছন্দের হওয়ায় বেশ কয়েকবার এখানে আসা হয়েছে। যেদিন জানলাম লন্ডন সাইন্স মিউজিয়াম এ এলাকাতেই ঠিক তার পরের সাপ্তহ চলে এলাম মিউজিয়াম দেখতে। যেন আর তর সই ছিলনা।

South Kensington ষ্টেশনে নেমেই হাটা ধরলাম। ষ্টেশন থেকে মিউজিয়ামে দুই ভাবে আসা যায়। রাস্তার উপর দিয়ে অথবা মাটির নিচের টানেল ধরে। টানেল ধরে আসার সুবিদা হচ্ছে রাস্তা হারানোর কোন সম্ভাবনা নেই। সেই সাথে রাস্থা পারাপারের কোন ঝামেলা নেই। এক টানেলেই মিউজিয়ামের সামনে চলে আসা যায়। টানেল থেকে বের হয়ে যেহেতু সাইন্স মিউজিয়ামে যাব তাই বাকি দুই মিউজিয়াম পাশে রেখে হাটা ধরলাম। সামনে গেলেই সাইন্স মিউজিয়াম।

অন্য মিউজিয়ামের মত এর বাহির খুব জাঁকজমক পূর্ণ নয় বললেই চলে।  বিশাল একটি পুরাতন দালান। এটি ১৮৫৭ সালে স্থাপন করা হয় যা বর্তমানে লন্ডনের অন্যতম টুরিস্ট আট্রাকশন। একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায় প্রতিবছর প্রায় ৩ দশমিক ৩ মিলিয়ন পর্যটক এটি দেখতে আসেন।  এছাড়া এটি লন্ডনের অন্য বড় মিউজিয়াম গুলোর মতই পর্যটকদের জন্যে বিনা মুল্যে প্রবেশের ব্যাবস্থা রেখেছে।  তবে অন্য মিউজিয়ামের মত এখানেও বেশ কিছু আক্সিবিশন হয় যাতে প্রবেশের জন্যে ফি দিতে হয়।

 

মিউজিয়ামটিতে রাখা চাঁদ থেকে নিয়ে আসা নুড়ি  পাথর। 

 

মিউজিয়ামে প্রবেশ করে বোকা বনে গেলাম। এক কথায় অসাধারন। কল্পনাও করিনি ভেতর এত সুন্দর আর সাজানো গোছানো হতে পারে। মিউজিয়ামটিতে মোট অবজেক্টের সংখ্যা ৩০০ হাজার ছাড়িয়ে গেলেও মিউজিয়ামটিতে এমন কিছু অবজেক্ট আছে যা দেখলে পর্যটক শুধু শিহরিত আর আনন্দিতই হয়না বরং অবাক হয়ে থাকিয়ে থাকে অনেক্ষন নিজের অজান্তেই! অনেকই জানেন আমি প্রানি বিদ্যার ছাত্র ছিলাম। জেনেটিক্স আমার পছন্দের সাবজেক্ট ছিল। চিটাগং ইউনি’তে পরিক্ষাও দিয়েছিলাম তবে ওয়েটিং লিস্টে নাম থাকলেও পরে আর সুযোগ মেলেনি।  উচ্চ মাধ্যামিক শ্রেনিতেকেই পরিচিত ছিলাম ক্রিক এবং ওয়াটসনের DNA double helix model এর সাথে। নিজের চোখের সামনে যখন সেই মডেলের রেপ্লিকা দেখলাম তখন কেমন অনুভুতি হয়েছিল তা এখন আর লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।  এছাড়া  Stephenson's Rocket,  Puffing Billy দেখে বেশ পুলকিত হলাম। আজ আমরা বুলেট ট্রেন থেকে শুরু করে যেসব অত্যাধুনিক ট্রেন ভ্রমন করছি তার শুরু যে এখান থেকেই। প্রথম  jet engine টাও রাখা হয়েছে এই মিউজিয়ামে। সেই সাথে শুরুর দিকের বেশ কিছু steam engines দেখে বেশ ভাল লেগেছে।  তবে অবাক আর বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলাম মর্ডান অয়ার্ল্ড গ্যালারির Apollo 10 command module দেখে। মনে পড়ে গেল ছেলে বেলার সেই ছড়া, আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা……।

 

পৃথিবীর প্রাচীনতম রেলওয়ে ইঞ্জিন

 

আরও একটি ইঞ্জিন 

 

স্টিম ইঞ্জিনের পাশে আমি

 

Apollo 10 command module এর সামনে আমি

 

old bess the oldest surviving steam engine, made by James Watt in 1777

 

ছোট বেলা সাধারন জ্ঞানের বইয়ে পড়েছিলাম পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার আবিষ্কার করেছিলেন ইংরেজ গনিতবিদ  Charles Babbage যার নাম ছিল  Difference engine তবে সত্যি বলছি কোন দিন কল্পনাও করিনি সামন থেকে দাড়িয়ে সেই প্রথম কম্পিউটার দেখা সৌভাগ্য আমার হবে। আল্লাহর কাছে অশেষ শুক্রিয়া যে তিনি আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছিলেন। মিউজিয়ামটিতে প্রথম typewriter এর বেশ কিছু কাগজ পত্র রাখা হয়েছে যা অনেক পর্যটকের মত আমারও দৃষ্টি কেড়েছে। তবে এত কিছুর মধ্যে একটা গ্যালারি আমাকে বেশ অবাক করে ছিল future gallery! অবাক করে দেবার মতই। এই গ্যালারিতে দর্শক বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ দেখতে পারবেন। দেখতে পারবেন অদূর ভবিষ্যতে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি কোথায় যাবে। এছাড়া একটা গ্যালারিতে কম্পিউটারের সামনে দাঁড়ালেই দেখা যাবে বিভিন্ন বয়সে আপনাকে দেখতে কেমন লাগবে। ব্যাপারটা আমার বেশ ভাল লেগেছে। এছাড়া নিজের শরিরের ভিবিন্ন মাংসপেশির নড়াচড়াও দেখা যায় যা সত্যিই অবাক করার মত।

 

Charles Babbage এর  Difference engine

 

ফিউচার গ্যালারিতে আমি 

 

গ্রীনউইচ টাইম সার্ভিস

 

ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, মিউজিয়ামটিতে প্রচুর বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা ছিল তবে বর্তমানে এসব প্রকাশনা বিভিন্ন ল্যাব এবং কলেজ লাইব্রেরিতে সরবরাহ করায় বেশির ভাগই অনুপস্তিত।

 

মিউজিয়ামে ডুকে ছিলাম সকাল ১১টায় কিন্তু কখন যে ঘড়ির কাটা ৩টা ১০মিনিট হয়ে গেছে বলতে পারব না! বিজ্ঞান সব সময়েই আমার পছন্দের বিষয় তাই বিজ্ঞানের এই সমুদ্র থেকে বের হয়ে আসতে কেন যেন মন চাইছিল না। মনে মনে ভাবলাম আবারও আসব এখানে। অমন সান্তনা দিয়েই চলে এলাম। তবে কেন যেন মনটা সেখানেই পড়ে রইল। 

 

ইচ্ছে আর সময় থাকলে ভিডিওটি দেখতে পারেন