মাছ ধরতে আটলান্টিক মহাসাগরে

12/12/2013 03:24

undefined
বোকা মাছের দল খাবার ছাড়াই এক বড়শীতে অনেক গুলো একসাথে

ছোটবেলা থেকেই মাছ ধরার প্রতি আমার অন্যরকম একটা আগ্রহ ছিল। বলতে পারেন নেশার মত। আমাদের বাড়ীর পাশেই যেমন নদী ছিল তেমনি ছিল বিশাল পুকুর। বড়শি দিয়েই মাছ ধরতাম। পুঁটি মাছ! বাসায় এনে ফ্রিজে জমিয়ে রাখতাম। বেশ কয়েকটা হলে মা ভাঁজি করে দিতেন। আহা সেই মাছ ভাঁজি!! এখনও চোখের সামনে ভাসছে। অনেক দিন হয় মায়ের হাতের রান্না খাইনা। খুব মিস করি।

এখানে যেহেতু আমি সমুদ্রের একেবারেই পাশে থাকি তাই পুরনো সেই নেশাটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। আমার বাসা থেকে মৎস পাড়া তেমন দূরে নয়। কাজেই একদিন হঠাৎ করে গিয়ে বড়শি কিনে নিয়ে আসলাম। কথা হল কয়েকজন মৎসজিবির সাথে। ঘণ্টা হিসাবে পে করব শুনে তারা রাজি হল রাতে তাদের সাথে সমুদ্রে মাছ ধরতে নিয়ে যাবে বলে! ডিল!!!

undefined
বড়শি টেনে এনে যখন দেখি একটাও লাগেনি তখন আর কি করা

undefined
সুতার টান বলছে বড়শীতে মাছ ধরছে


মাছদের জমিয়ে রাখা

তখন গ্রীষ্ম কাল! সমুদ্রে হালকা ঠাণ্ডা বাতাসে আমরা ভেসে বেড়াই মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে। আমরা একা নই আরও অনেকে আমাদের মত করেই মাছ ধরতে সমুদ্রে আসে। সে এক অন্যরকম অ্যাডভাঞ্চার। শুরুর দিকে তেমন মাছ ধরা না পড়লেও পরবর্তীতে প্রচুর মাছ পড়তে লাগল। ফলে ব্যাপারটা আবার নেশার মত হয়েগেল। রাতে বাসায় এসে রাত ১টা থেকে ৮ টা কোন দিন ভোর পর্যন্ত চলত আমাদের মাছ ধরা। বেশি ম্যাক্রল মাছ পড়ত। তবে মাঝে মাঝে ইল, সি বাস আর ডগ ফিস(ছোট হাঙ্গর) পড়ত। ছোট হাঙ্গর বা ডগ ফিস বড়শীতে লাগলে অনেক সময় বাধ্য হয়েই সময় বাঁচাতে বড়শি সহ কেটে দিতে হত। এরা খুব শক্তিশালী যে খুব সহজে এদেরকে বড়শি থেকে খোলা যায়না।

এখানে একটা মজার তথ্য দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। ম্যাক্রল ফিসিং এর জন্যে আমরা যে বড়শি ব্যাবহার করতাম তাতে কোন খাবার দিতে হত না। মানে প্রতিটি বড়শীতে প্লাস্টিকের চিংড়ি মাছ বা মাছের মত করে অন্যে কিছু লাগানো থাকত। আবার সেই গুলো এমন ধরনের পদার্থ দিয়ে তৈরি করা যে অন্ধকারে আলোক বিচ্চুরন করে। একটা সুতায় এক সাথে পাঁচটা হুক থাকলেও মাঝে মাঝে বেশি মাছ পড়লে আমি সুতায় ডাবল বড়শি বা ১০টা হুক লাগিয়ে দিতাম। এতে এক সাথে প্রায় ৬ থেকে সাতটা মাছ ধরা যেত একবারেই!


সমুদ্রে জোয়ার তাই এখন আর মাছ ধরবে না! কাজেই এভাবে অপেক্ষা করা কবে জোয়ার নামবে


সমুদ্রে এখন জোয়ার মানে সময় এখন পোজ দেবার

সেই সাথে প্রতিটি বোটে একটি বিশেষ যন্ত্র রাখা থাকে যা পানির নিচে মাছের উপস্তিতি জানান দেয়। সহজ করে বুজিয়ে বললে এভাবে বলতে হয়, যখন মাছের পাল/দল বোটের কাছে আসে তখন এই বিশেষ যন্ত্রটা বিপ দিতে থাকে। ফলে মাছ ধরা বেশ সহজ ছিল। সেই সাথে আমার ঘড়িতে যেহেতু একই সুবিদা ছিল তাই মাছ আসলেই আমার ঘড়ি আমাকে সতর্ক করে দিত। ফলে অল্প শ্রমে বেশি মাছ ধরা সম্ভব হত। দেখা যেত প্রতিবারই আমি বালতি ফিলাপ করে ফেলতাম।


এভাবে বড়শি রাখা মানে এখন মাছের দেখা নেই


ছবিটা বলছে আমরা ফিরে যাচ্ছি সৈকতে


সীমাহীন সমুদ্র আর সুনীল আকাশ


আমাদের মত করে আরও অনেক মাছ ধরতে ব্যাস্ত


আমাদের মত করে আরও অনেক মাছ ধরতে ব্যাস্ত

এখন শীতকাল তাই আবার মাছ ধরার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েকটা মাস। তত দিন পর্যন্ত সময় গুনা ছাড়া কোন উপায় দেখছিনা। তবে শেষ করার আগে একটা অভিজ্ঞতার কথা না বললেই নয়। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি পূর্ণিমার রাতে সবচেয়ে বেশি মাছ পড়ে আবার ঠিক একই ভাবে অমবস্যাতে মাছ পড়ে সবচেয়ে বেশি আর বাকি সময় খুবই কম। হয়ত চাঁদের সাথে কোন সম্পর্ক আছে এদের চলা ফেরায়।


ফিরছি সৈকতে অনেক মাছ পড়েছে তাই মনটাও ফুরফুরে

মাঝে মাঝে যখন মাছ ধরতে ধরতে ক্লান্ত হয়ে যেতাম, তখন বাসায় ফিরার আগেই সমুদ্র সৈকতে বসে তাজা মাছটা পুড়িয়ে খেয়ে বাসায় এসেই দিতাম ঘুম। তাজা মাছ পুড়িয়ে খাওয়ার স্বাদটাই অন্য রকম।



প্রায় রাতেই এভাবে সমুদ্রের পাড়ে মাছ পুড়িয়ে খাওয়া ছিল অন্যরকম এক ভাললাগা

undefined
মাছ পোড়া হয়ে গেছে