মমির অভিশাপে অভিশপ্ত হল যারা

27/08/2014 20:48


মমির অভিশাপ নিয়ে বিশ্ব জুড়ে তোলপাড় শুরু হয় মলতঃ যখন একজন ইংরেজ প্রত্নতত্ত্ববিদ Howard Carter এবং তার দল Lord Carnarvon (George Herbert, 5th Earl of Carnarvon) এর অর্থায়নে মিসরের luxor এর পাশে vally of the kings’এ tutankhamun বা king tut এর সমাধি আবিষ্কার করেন তার পর থেকেই।

প্রাচীন মিসরের মমির সমাধির দরজায় লেখা থাকত অদ্ভুত ভূতুড়ে সব অভিশাপের বানী। তবে বেশির ভাগ মানুষই সেটা বিশ্বাস করত না। যদি তারা করত তবে এত গুলান মমি আবিষ্কার সম্ভব ছিলনা। এখনও মমি আবিষ্কৃত হচ্ছে! তাছাড়া বেশির ভাগ মমির সংরক্ষিত সমাধির গুপ্তধন চুরি করার জন্যে চুরেরাই খুলেছে। এমন অবস্থায় অভিশাপ সত্যি হলে এত গুলো মমির গুপ্তধন চুরি হবার কথা নয়। বেশির ভাগ মানুষই অভিশাপের পেছনে যুক্তি দাড় করিয়েছে। তাহলে কি মমির অভিশাপ বলে কিছু নেই? সব ভুয়া! ইতিহাস কিন্তু উল্টো বলছে!


সমাধির ভিতরের দৃশ্য

মিসরের ভেলি অব কিং’এ একটি সমাধি সৌধ খুঁজছিলেন একজন প্রত্নতত্তবিদ। যাকে অর্থায়ন করছেন আরও একজন সুদূর ইংল্যান্ড থেকে Lord Carnarvon । খুজতে খুজতে চলে গেছে চার বছর। Lord Carnarvon ভাবলেন অযথা টাকা খরচ করে আর লাভ কি। বন্ধ করে দাও খুজাখুজি। সময় চাইলেন Carter। আরও একটা মৌসুম! রাজি হলেন Lord Carnarvon। তবে এটাই শেষ সুযোগ! Carter জানতেন কি এক অদ্ভুত কারনে একজন ফারাও রাজার নাম নেই কোন দলিলে। মুছে ফেলা হয়েছে। তবে খুঁজা খুঁজি করার সময়ে দু একটি অবজেক্ট যে গুলো ভেলি অব দা কিং’এ পাওয়া গেছে সে গুলোতে নাম আছে তার! tutankhamun বা king tut!! সমাধি চুরদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার সবচেয়ে সুন্দর যুক্তি! লুকিয়ে আছে গুপ্তধন নিয়ে আশে পাশে কোথাও। মাটির নিচে। যদি আবিষ্কার করা যায় তাহলে প্রায় ৩০০০ বছরের পুরাতন কিছু দেখবে পৃথিবী! Carter এর ছিল হলদে রঙয়ের একটি পোষা পাখি। তিনি প্রায়ই বলতেন এই পাখিই তাদেরকে গুপ্ত ধনের কাছে নিয়ে যাবে! ক্যালেন্ডারের পাতায় তখন ১৯২২ সালের ৪ নভেম্বর। Rameses VI এর সমাধির পাশেই আবিষ্কৃত হল tutankhamun বা king tut এর সমাধি! সমাধির সিলে ছিল এক ভয়ঙ্কর বানী! “Death Shall Come on Swift Wings To Him Who Disturbs the Peace of the King...”


সমাধির প্রবেশ পথে Carter


সমাধির গোপন চেম্বারে প্রাপ্ত স্বর্ণের জিনিস পত্র

সমাধির দরজায় এমন অভিশাপের বানী থাকা যেন প্রাচীন মিসরের কালচার! সমাধি ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষাকরার শেষ চেষ্টা! Carter’এর অত সব ভাবনার সময় নেই। অনেকটা গোপনে Carter খবর পাঠালেন ইংল্যান্ডে! কয়েকদিনের মধ্যেই Lord Carnarvon তার মেয়েকে নিয়ে পৌঁছে গেলেন মিশরে। তার উপস্তিতিতেই খুলা হল সমাধির সিল করা দরজা। উত্তেজনায় কাঁপছে সবাই। মোমের আলো জ্বালিয়ে সিল করা দরজায় সামান্য ছিদ্র করা অংশ দিয়ে প্রথমে ভিতর দেখার চেষ্টা করলেন Carter। উত্তেজিত Lord Carnarvon জিজ্ঞেস করলেন, "Can you see anything?" Carter উত্তর দিলেন বিখ্যাত ভাবেই, "Yes, wonderful things"। তবে সমাধি সৌধ আবিস্কারের পর থেকেই শুরু হল অদ্ভুত সব ঘটনা! যেদিন সমাধি আবিষ্কার হল ঠিক সেই দিন, হ্যা ঠিক সেই দিন একটি কোবরা সাপ খেয়ে ফেলল Carter এর প্রিয় পোষা পাখিটা! এখানেই শেষ নয়, বরং এখনা থেকেই শুরু!! সমাধি সৌধ খুলে দেখা গেল মমিতে যে স্বর্ণের মুকুট পরানো তার ঠিক উপরে একটি কোবরার প্রতিকৃতি!


সমাধির প্রবেশ মুখে সাদা শার্ট পরা Lord Carnarvon

কয়েকদিন যেতে না যেতেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন আরেকজন, Lord Carnarvon! সমাধি সৌধ খোলার সময়ে তার বাম গালে কামড় বসিয়েছিল একটা মশা, ম্যালেরিয়া! সেই কামড় থেকে ইনফেকশন! মিশরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন Lord Carnarvon। তার আর ফিরে আসা হল না লন্ডনে। যে দিন তিনি মারা গেলেন ঠিক সেই মুহূর্তে মিসরের কায়রো শহরের সব গুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেল! একটা দুইটা নয় ছয় ছয়টা বিদ্যুৎ প্লান্ট! তাও এক সাথে! কাহিনী এখানেই শেষ নয়! ঠিক একই সময়ে ইংল্যান্ডে Lord Carnarvon’র পোষা কুকুর মারা গেল কোন কারন ছাড়াই! দিনটি ছিল ১৯২৩ সালের ৪ এপ্রিল। তার মৃত্যুর পরে যখন মমি পরীক্ষা করা হল, দেখা গেল মমির বাম গালে অদ্ভুত একটি দাগ, একই জায়গায় যেখানে মশা কামড় বসিয়েছিল Lord Carnarvon কে! অনেক গবেষক এখনও মনে করেন বালক রাজা tutankhamun বা king tut এর মৃত্যু হয়েছিল মশার কামড়ে হওয়া ম্যালেরিয়া থেকেই!

Lord Carnarvon মারা যাবার কয়েকদিন পর জ্বর আক্রান্ত হয়ে ১৬ মে মারা গেলেন আরেকজন, George Jay Gould I। তারও কিছুদিন পর ১০ জুলাই মারা গেলেন আরেকজন, Prince Ali Kamel Fahmy Bey । এবারের জন মারা গেলেন নিজের স্ত্রীর হাতে, গুলিবিদ্ধ হয়ে! চলতে থাকল মৃত্যু। অভিশাপ যেন সবে শুরু হয়েছে মাত্র! একই বছর ২৬ সেপ্টেম্বর প্রায় অন্ধ হয়ে রক্তের ইনফেকশন থেকে মারা গেলেন Lord Carnarvon এর ভাই Aubrey Herbert।


স্বর্ণের কফিন


কাপড় ছাড়া শুধু শরীর

পরের বছর ১৫ জানুয়ারি মারা গেলেন Sir Archibald Douglas-Reid। তিনি একজন radiologist ছিলেন। তিনিই প্রথম মমির এক্সরে করেছিলেন! তার মৃত্যুর কারন বের করতে পারেনি কেউ! এক অজানা মৃত্যুতেই চলে যেতে হয় তাকে। একই বছর ১৯ নভেম্বর কায়রোতে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা জান Sir Lee Stack। এর পর কয়েক বছরের বিরতি! ১৯২৮ সালে Carter এর excavation এর মূল দলের একজন সদস্য A. C. Mace মৃত্যু বরন করেন আর্সেনিক বিষক্রিয়ায়! তার ঠিক পরের বছর, ১৯২৯ সালের ২৬শে মে Lord Carnarvon এর আরেক ভাই Mervyn Herbert ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে অভিশাপের ষোলকলা যেন পূর্ণ হয়! একই বছর ১৫ই নভেম্বর Carter এর ব্যাক্তিগত সেক্রেটারি Richard Bethell কে বা কারা বিছানায় শ্বাস রুদ্ধ করে হত্যা করে ফেলে যায়! তার কয়েকদিন পর ১৯৩০ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি Richard Bethell এর বাবা নিজেদের সাত তলা বাসার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তবে দলের মূল কর্তা ব্যাক্তি Carter যিনি সর্ব প্রথম সমাধি সৌধে প্রবেশ করেছিলেন তার মৃত্যুও স্বাভাবিক ছিলনা! তিনি lymphoma আক্রান্ত হয়ে ৬৪ বছর বয়সে ১৯৩৯ সালের ২রা মার্চ মৃত্যু বরন করেন।


সমাধি থেকে কফিন নিয়ে আসা হচ্ছে

tutankhamun বা king tut এর মমি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে জানলাম Carter কে সমাহিত করা হয়েছে লন্ডনে। মাথায় ছিল সুযোগ পেলেই যেতে হবে তার সমাধি দেখতে। অবশেষে সেই সুযোগ আসল। অনেকটা প্লান করে যাচ্ছিলাম রিচমন্ড পার্কে। ডিয়ার ফটোগ্রাফির জন্যে। তাকে সমাহিত করা হয়েছে Putney vale cemetery তে। রিচমন্ড পার্কের পাশেই। বেশ বড় সিমেট্রি তবে তার সমাধি খুঁজে পেটে তেমন সমস্যা হল না। সমাধির মাথার কাছে রাখা ফলকে লিখে রাখা হয়েছে অদ্ভুত সুন্দর কিছু কথা, “May your spirit live, may you spend millions of years, you who love thebe, sitting with your face to the north wind, your eyes beholding happiness” and “O night, spread thy wings over me as the imperishable stars”


সর্ব শেষ সিটি স্কেন করার সময় তুলা ছবি

মমি আবিস্কারের প্রায় শত বর্ষ পূর্তি হতে চলেছে। তবে এখনও মনে করা হয় মমি কে যদি কেউ ডিস্টার্ব করে তবে সেও হতে পারে অভিশপ্ত! বিশ্বাস করুন এর নাই করুন, একসময় মূল সমাধি সৌধ পর্যটকদের জন্যে খুলে রাখা হলেও বর্তমানে তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে! শুধু তাই নয়, সর্ব শেষ যখন মমি সমাধি সৌধ থেকে বের করে নিয়ে আসা হয় সিটি স্ক্যান করার জন্যে ঠিক সেই দিন, হ্যা ঠিক সেই দিন ঘটে ছিল অদ্ভুত সব ঘটনা। মমি বের করে নিয়ে আসার সময় হঠাৎ করেই শুরু হয় প্রচণ্ড ঝড়! অবশেষে মমিকে নিয়ে যাওয়া হয় হসপিটালে। মমি যখন সিটি স্ক্যান মেশিনে দেয়া হয় ঠিক সেই মুহূর্তে কোন কারন ছাড়াই সম্পূর্ণ ব্র্যান্ড নিউ মেশিন বন্ধ হয়ে গিয়ে ছিল। বন্ধ ছিল প্রায় এক ঘণ্টা! এর পর থেকে মমিকে আর ডিস্টার্ব করা হয়নি কখনও! কারন অভিশাপটা ছিল এরকম, cursed be those who disturb the rest of the fharaoh. They that shall break the seal of this tomb shall meet death by a disease that no doctor can diagnose!