বিলেতের পথে পথে: ডোবার দুর্গ

05/11/2013 01:57


undefined
ডোবার দুর্গ

ইংল্যান্ডে যে কয়েকটি দুর্গে আমার যাবার সুযোগ হয়েছে তার মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুর্গ মনে হয়েছে ইংল্যান্ডের ক্যান্ট কাউন্টির ডোবারে অবস্তিত ১২শ শতাব্দীতে নির্মিত Dover Castle বা ডোবার দুর্গ। এটি ইংল্যান্ডের মধ্যে অবস্তিত সবচেয়ে বড় দুর্গ। শুধু কি তাই? অবস্থানের দিক দিয়ে এটি অত্যান্ত গুরুত্ব পূর্ণ স্থানে নির্মিত হওয়ায় ইংল্যান্ডের প্রতিরক্ষায় এর ভুমিকা অনস্বীকার্য।


দুর্গের প্রবেশ মুখে আমি

ইতিহাস সাক্ষিদেয় এই এলাকায় মানুষের বিচরণ ছিল সেই আদিম যুগ থেকে। বিশেষ করে প্রস্তর যুগ, লৌহ বা তম্র যুগের অনেক নিদর্শন পাওয়া গেছে এই অঞ্চলে। সেই সাথে ফরাসীদের সাথে এই অঞ্চলের দুরত্ব কম হওয়ায় এই দুর্গটি ইংল্যান্ডের প্রতিরক্ষার কী হিসাবে উল্ল্যেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

যদিও এটি অনেক আগে নির্মিত হয়েছিল তবুও Henry II ই মূলত দুর্গটিকে একটি অত্যাধুনিক দুর্গে রুপান্তরিত করেন। নেপলিয়ানের আগ থেকেই যেহেতু ব্রিটিশ এবং ফরাসীদের মধ্যে ভাল সম্পর্ক ছিলনা। কাজেই প্রতিরক্ষার জন্যে দুর্গটি নির্মাণ করা অত্যান্ত দরকারি হয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে ১২১৬ সালের দিকে একদল বিদ্রুহি যখন ফ্রান্সের Louis VIII কে ইংল্যান্ডে আক্রমনের জন্যে প্ররোচনা দেয় তখন দুর্গটি দেশটির প্রতিরক্ষায় অত্যান্ত গুরুত্ব পূর্ণ অবদান রাখে। তবে ইতাহাস থেকে জানা যায় ১৬৪২ সালে রাজপরিবার এবং পার্লামেন্টেরিয়ান সমর্থকদের মধ্যে যে গৃহ যুদ্ধ ( English Civil War) সংঘটিত হয়েছিল সেই সময় দুর্গটি পার্লামেন্টেরিয়ানরা দখল করে নিয়েছিল।

তবে ১৮শ শতাব্দীতে দুর্গটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। এসময় দুর্গতিতে প্রায় দুই হাজার সেনা ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন পাতাল সেনানিবাস, হাসপাতাল এবং অনেক গুলো পাতাল টানেল তৈরি করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে ইংল্যান্ডে এখানেই একমাত্র পাতাল সেনা নিবাস নির্মিত হয়েছিল। মাজার ব্যাপার এই যে, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় এই টানেল গুলো গোপন মিলিটারি কমান্ড সেন্টার হিসাবে ব্যাবহার করে হত। মূলত দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় শত্রু বাহিনীর আক্রমন প্রতিহত করার জন্যে দুর্গটি ভুমিকা ছিল অসামান্য।


এই সেই জায়গা যেখান থেকে হিটলার বাহিনীর প্লেনের উপর নজর রাখতেন সৈনিকেরা


শত্রু বাহিনীর বিমান ধ্বংস করার জন্যে ব্যাবরিত হত এটি



দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের একজন সৈনিক


টানেলের ভিতরের একটি দৃশ্য

এখানে একটা তথ্য না দিলেই নয়। দুর্গটিতে এখনও এমন অনেক পাতাল টানেল রয়েছে যা এখনও অনাবিষ্কৃত। ধারনা করা হয় একেকটি টানেল প্রায় তিন মাইলেরও বেশি দীর্ঘ। সেই সাথে টানেল নিয়ে আমার নিজের অভিজ্ঞতাটাও বলা উচিত মনে করছি। উত্তর দিকের একটি টানেলে অনেকটা শখের বসেই ডুকে পড়ে ছিলাম আমি। প্রবেশ পথে সতর্কতা মূলক ভাবে লিখা ছিল "এই টানেল গুলো অনেক নিচু আর অন্ধকার"। তবে আরও অনেকে ডুকছে দেখে সাহস করে ডুকে পড়লাম। একসময় আর বের হতে পারছিলাম না! ছিলনা মুবাইলের নেটওয়ার্ক! কানে এয়ার প্রেশার হচ্ছিল। অনেক ভয় পেয়ে গিয়ে ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ্‌ প্রায় ৪০ মিনিট পর আলোর দেখা পেলাম। আসলে আমি খুব গভীরে যাইনি। কিন্তু টানেল গুলো এমন ভাবে নির্মিত যে একটু ভিতরে গেলেই পথ ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা আশি ভাগ! আমার মাথায় আসেনি যুদ্ধ কালীন সময়ে সৈনিকরা কিভাবে খুব দ্রুত এই সব টানেল ব্যাবহার করত।


দুর্গের উপর থেকে তুলা ডোবার সমুদ্র বন্দর


মুদ্রা ভর্তি থলে


বিভিন্ন দলিল এবং স্বর্ণ মুদ্রা


এই চেয়ার গুলোতেই বসতেন অফিসাররা 


সভা কক্ষ


যুদ্ধের সময় সৈনিকদের ব্যাবরিত বর্ম


দুর্গের কয়েকজন সৈনিকের সাথে আমি

বর্তমানে এটি পর্যটকদের জন্যে খুলে রাখা হয়েছে। একটি সমিক্ষা থেকে জানা যায় শুধু মাত্র ২০১০ সালে প্রায় ৩৫০,০০০ পর্যটক এটি ভিজিট করেছেন।