বিলেতের পথে পথেঃ রিচমন্ড রয়্যাল পার্ক (শেষ পর্ব)
রিচমন্ড পার্কের অসাধারণ একটি জায়গা Isabella Plantation
এর পর হেটে হেটে আমি চলে এলাম Isabella Plantation এ। অনেকটা সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা একটি গার্ডেন। চারপাশে ফেন্স করে রাখা যাতে হরিনের পাল গাছ গুলোর কোন ক্ষতি করতে না পারে। পার্কের সুন্দর জায়গা গুলোর একটি। এটি তৈরি করা হয়েছিল ১৮১৯ থেকে ১৮৩৫ সালের মধ্যে। হরেক রঙয়ের গাছ পালার মঝে মন হারিয়ে যাবে যেকোন পর্যটকের।
আরও একটি ছবি
White Lodge
আমার পরের গন্তব্য ইতিহাসের আরেক সাক্ষী White Lodge’ এ। তবে চলতে গিয়ে এদিক সেদিক খুঁজ রাখছিলেম কোথাও হরিনের দেখা মিলে কি না। নাহ্! তখনও একজনেরও দেখা নেই। সময়টা মধ্য দুপুর। সমস্যাটা এখানেই! ১৭৩০ সালের দিকে নির্মিত হলেও বেশ সুন্দর একটি দালান। আমাদের দেশে যেখানে মোগল আমলের স্থাপত্য গুলো সংগ্রহ করতে পারছি না সেখানে এদের ইতিহাস কদর দেখলে সত্যি হিংসে হয়। এখানেই ১৮৯৪ সালে কিং Edward VIII জন্ম গ্রহন করেছিলেন। তাছাড়া এই দালানটিতে ১৯২০ দশকে বর্তমান রানীর মা এলিজাবেথ প্রথম বসবাস করতেন। দুষ্ট কাঠ বিড়ালীর খপ্পরে পড়লাম। খুব সুন্দর করে পোজ দেয় ঠিকই কিন্তু ছবি তুলতে গেলেই ভোঁ দৌড়। সাথে কয়েকটা খরগুস দেখে ভাল লাগল।
অনেক কষ্টে ক্যামেরায় ধারন করা দুষ্ট কাঠবিড়ালি
খরগুস
হাটতে হাটতে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হল কারন আমি সাধারণ ট্রেইল ছেড়ে ঘ্রাস ল্যান্ড ধরে হাঁটছিলাম। রাস্তে সংকেপ করার জন্যে। শুরু হল পায়ে খিঁচুনি। দেখলাম পায়ে ঘাসের খোঁচা লেগে অবস্থা খারাপ। বেশ কিছু জায়গা কেটে রক্ত ঝরছে। তাই সাথে থাকা ইফতারের জন্যে বাসা থেকে নিয়ে আসা পানির বোতল দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিতে হল। অতঃপর গাছের নিচে কিছুক্ষন বিশ্রাম। চোখ বন্ধ করে গাছে হেলান দিয়ে বসে আছি। চার পাঁচ মিনিট হবে চোখ খুলতেই দেখি আমার একদম কাছাকাছি চার পাঁচটা হরিন। ঘাস খেতে ব্যাস্ত। আমি একটুও নড়লাম না। শুধু ক্যামেরাতে ক্লিক করছি। তবে মজার ব্যাপার হল। এরা তেমন কোন রি-আকশন করলনা। মনে হল ছবি তুলতে বেশ পছন্দ করে এরা। ভিবিন্ন ভাবে পজ দেয়ার চেষ্টা।
চোখ খুলে উনাকেই প্রথমে চোখে পড়ল
এবার এদের পিছু নিলাম। মনে হল এরা আমাকে আর তেমন উঠকু ঝামেলা মনে করছে না। ঘাস, গাছের পাতা যা পাচ্ছে সাবাড় করছে। আর আমি হাঁটছি এদের পিছু পিছু।
অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা
কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ঘাস খেতে ব্যাস্ত হলেন উনি
হি হি হি.. আমি আর উনি
আরেকটা
ঘাস খেতে ব্যাস্ত একজন
গাছের পাতা সাবাড় করছেন একজন
হেটে হেটে চলে এলাম লেকের পাশে। বিশাল লেক! না দেখলে কল্পনা করতে পারবেননা। এরকম একটি জায়গায় বসে সারা দিন কাটিয়ে দেয়া যাবে। হরিনেরা এখানে আসে পানি পান করার জন্যে। লেকের পানিতে আছে হাজার রকমের জলজ পাখি। বিশেষ করে ম্যান্ডারিন, সাদা এবং কালো সোয়ান নজর কাড়ল সহজেই।
অদ্ভুত সুন্দর এই হাস পাখিটার নাম ম্যান্ডারিন
লেক
ঘড়ির কাটায় তখন পাঁচটা বেজে গেছে। পেটে খিদে লেগেছে খুব। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। এবার ফিরার পালা। হেটে আসার সময়ে Bishop's Pond এবং Conduit Wood জায়গাটার মধ্যে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলাম। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময়ে এখানে একটি হাসপাতাল ছিল যেটি পরে ১৯২৫ সালে ভেঙে ফেলা হয়। এখন আর কোন চিহ্ন নেই তার তবুও চোখ বন্ধ করে মানুষের পদধ্বনি শুনার বৃথা চেষ্টা করলাম।
Rhododendron Flower
যাবার পথে পাঠকের জন্যে একটা মজার তথ্য দিতে চাই। রিচমন্ড নামে জার্মানিতেও এরকম একটি পার্ক আছে। আছে একটি প্যালেসও। ব্যাপারটা কাকতালীয় নয়। রাজা জর্জ তৃতীয় এর বোন Princess Augusta’র বিয়ে হয়েছিল Duke of Brunswick সাথে। তিনি খুব মিস করতেন তার বাল্যকালের সৃতি বিজড়িত এই জায়গাটি। আর সে কারণেই তৈরি করা হয় পার্কটি। হয়ত কোন একদিন যাওয়া হবে সেই পার্কেও! আশায় থাকতে দুষ কি?