বিলেতের পথে পথেঃ পাতাল রেলে ভুতের ছায়া (পর্ব- ২)

02/01/2015 00:34

ইস্ট লন্ডনের বেথনাল গ্রিন ষ্টেশনটা আমার বেশ পরিচিত। কারন লন্ডনে আসার পর এই ষ্টেশনের পাশেই কাজিনের বাসায় ছিলাম বেশ কিছু দিন। ষ্টেশনের পাশের পার্কের কয়েকটি কাঠবিড়ালির সাথে ভাব হয়ে গিয়ে ছিল। বিকালে এখানে ফুটবল খেলতাম। 

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ চলা কালে ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে ইংল্যান্ড যখন জার্মানির সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে তখন স্বাভাবিক ভাবেই লন্ডন জার্মান এয়ার রেইডের আওতায় চলে আসে। ফলে মানুষজন এয়ার রেইডের সময়ে যে কয়টি পাতাল রেলে আশ্রয় গ্রহন করত তার মধ্যে বেথনাল গ্রিন ষ্টেশন অন্যতম। বিশেষ করে এটি ভূমি থেকে বেশ নিচে এবং আকারে বড় হওয়ায় জার্মান এয়ার রেইডের সাইরেন বাজানোর সাথে সাথে এই ষ্টেশনে আশ্রয় গ্রহন করত প্রায় ৭ হাজার শরণার্থী। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য বিলেতে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সবচেয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছিল এখানেই।  

এভাবেই ষ্টেশনের ভিতরে মানুষ আশ্রয় নিত জার্মান বোমা হামলার হাত থেকে বাঁচার জন্যে

একই প্লাটফর্মের বর্তমান দৃশ্য 

৩রা মার্চ ১৯৪৩ সাল। ঘড়ির কাটায় রাত ৮.১৭ মিঃ। জার্মান এয়ার রেইড হবে কিছুক্ষনের মধ্যেই। চারদিকে শুরু হল সতর্কতা মূলক সাইরেন। প্রথম ধাপে প্রায় ৫০০ জন শরণার্থী টানেলে আশ্রয় নিয়েছিল। সাইরেন শুনে ৮.২৪ এর মধ্যেই আরও প্রায় ১৫০০ জন শরণার্থী ভিতরে প্রবেশ করল। বাহিরে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। আবার সিঁড়ির কোন রেলিং ছিল না। সাই সাথে জায়গাটা বেশ অন্ধকার। লাইন ধরে প্রবেশ করছিল সবাই। ঠিক সেই সময় ষ্টেশনের পাশের পার্কের anti-aircraft battery থেকে বেশ কয়েকটা রকেট আকাশে ছুড়া হল। আর বিপক্তি ঘটল তখনই। এত জুরে শব্দ হল যে চারদিকে শুরু হল হইচই। সবাই ভাবল এয়ার রেইড শুরু হয়েছে। তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে  পিচ্ছিল সিঁড়িতে একজন মহিলা তার ছোট বাচ্চা সহ পিছলে পড়লে বাকিরাও একজন আরেক জনের উপরে পড়তে থাকে। চারদিক অন্ধকার। দুর্ঘটনাটা এতই মারাত্মক ছিল যে ১৭০ জান প্রান হারিয়েছিল যাদের মধ্যে ৬২ শিশু, ৪০জন মহিলা এবং ২৭ জন পুরুষ ছিল।

সেই সিঁড়ি যেখানে দুর্ঘটনা ঘটে ছিল

সিঁড়ির বর্তমান রূপ 

এই ট্র্যাজেডি মার্ক করে রাখতে ষ্টেশনের প্রবেশ পথে আছে একটি সৌধ।

সিঁড়ির সামনের মেমোরিয়ালের প্লাক 

তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে লন্ডন পাতাল রেলের ভূতের গল্প বলতে চাইলে এই ষ্টেশনের নাম আসবে সকলের আগে। কারন সবচেয়ে বেশি মানুষ ভিবিন্ন সময়ে তাদের অদ্ভুত সব অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন এই ষ্টেশনকে ঘিরে। তবে সকলেই বলেছেন তারা মানুষের আর্তনাদ, ছোট ছোট বাচ্চাদের কান্না কাটি শুনেছেন। উল্ল্যেখ্য ১৯৮১ সালে একজন ষ্টেশন মাষ্টার রাতে ডিউটি করছিলেন। তখন ষ্টেশনটি বন্ধ ছিল। তিনি প্লাটফর্মে বাচ্চাদের কান্নাকাটি আর একজন মহিলার আর্তনাদ শুনছিলেন প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধরে। তিনি এতই ভয় পেয়েছিলেন যে দ্রুত ষ্টেশন থেকে বের হয়ে আসেন।