বাদুর ঝুলা

01/08/2013 01:39

বাদুর ঝুলা বুজেন তো? বাসে কখনও বাদুর ঝুলা ঝুলেছেন? মানুষ শখ করে এভারেস্টে উঠে আর আপনি সামন্য বাদুর ঝুলা ঝুলবেন না এটা কেমন কথা! তাই এই অভিজ্ঞতা না থাকলে একদিন লোকাল বাসে উঠে ঝুলে পড়ুন। এই যেমন আজ আমি ঝুলছি।

আমি অবশ্য শখ করে ঝুলছিনা। এটা আমার শাস্তি। আলসেমি করে কলেজ বাস মিস করেছি। ব্যাটা দাদুর উপর মেজাজ খারাপ হচ্ছে। আরকেটু সময় অপেক্ষা করলে কি এমন ক্ষতি হত। এখন এই জাহান্নামের বাসেই যেতে হবে। কি আর করা। বাদুরের মত করে ঝুলে পড়লাম। আমি অবশ্য একা ঝুলছি না, সাথে আরও কয়েক জন ছেলে ঝুলছে। দেখে মনে হল নাইন টেনে পড়ে। সামান্য সরে গিয়ে এরা আমার ঝুলার জায়গা করে দিল। এই বয়সের ছেলেদের এই জিনিসটা আমার খুব ভাল লাগে। আর যাই হোক গাঁয়ে এসে ডলাডলি করবেনা। এই ধিক দিয়ে ত্রিশ-ঊর্ধ্বরা মাশাআল্লাহ। লুইচ্চামিতে এরা নোবেল পাবে। গাড়িতে এদের পাশে বসলে এদের বসার স্টাইলটাই পাল্টে যায়। একটা মেয়ের বাহুর সাথে বাহু ঘষে এরা যে কি মজা পায় আমার মথায় আসেনা। দু একজন পারলে কুনুই দিয়ে এমন ভাবে খুচানু শুরু করে যেন এরা ভিন গ্রহ থেকে এসেছে। বাকি টুকু আর বলতে ইচ্ছে করছে না।

গাড়িতে উঠার পর থেকেই মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। মহিলাদের জন্যে সংরক্ষিত সিটে বসে আছে কয়েকজন পুরুষ। বসে থাক বাবা সমস্যা নেই। কিন্তু এমন ভাব করছে যেন এই সিটে বসতে পারায় এদের চৌদ্দ্য গুষ্টি উদ্দার হয়ে গেছে। একটা মেয়ে গাড়ীতে উঠলে যে সিটটা খালি করে দেয়া উচিত সেই জ্ঞানটুকুও লোপ পেয়েছে এদের। অবশ্য একজন উঠে জায়গা দিলেও বসার কোন পরিবেশ নেই। আরও কয়েক জন বসে আছে। যারা বসে আছে এদের পাশে বসার ইচ্ছা কিংবা সাহস কোনটাই আমার নেই।

যত সময় যাচ্ছে বাসে ভিড় বাড়ছে। এমনিতেই অনেক গরম তার উপরে বাসে ভিড় হলে কেমন লাগে চিন্তা করেন! এর মধ্যে আবার পেছনের সিটে বসে দুইজন সিগারেট ধরিয়েছে। তাই নাক সিকায় তুলে কোন রকমে ঝুলে রইলাম।

আমার ঠিক সামনের সিটে একটা মেয়ে বসে আছে। দেখে মনে হচ্ছে সপ্তম কি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। খুব যত্ন করে কেউ মাথায় বেনি করে দিয়েছে। কিছু চেহারা আছে যে গুলো দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে হয়। মেয়েটার চেহারা সেই দলে পড়ে। ইচ্ছে হচ্ছে সামন্য কথা বলি কিন্তু আলসামি হচ্ছে। কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।

হঠাৎ কোমরের কাছে কিছু একটা অনুভব করলাম। কয়েকটা আঙুল অতঃপর একটা হাতের উপস্তিতি। সুড়সুড়ি দেয়ার মত করে। যেমনটা টুপ গিলে খাওয়ার জন্যে একটা মাছ করে। হাতটা ধিরে ধিরে আরও সচল হচ্ছে দেখে শরীরটা ঝাকি দিয়ে সামান্য সামনে গেলাম। তবে এবার শুধু হাত নয় ঘাড়ের কাছে গরম নিঃশ্বাসের উপস্তিতি! সামনে বসা সেই মেয়েটার মুখে চোখ পড়তেই বুঝলাম মেয়েটা ব্যাপারটা লক্ষ্য করছে। আমার রাগের সাথে মেয়েটার রাগও যে বাড়ছে বুজতে পারলাম। ইশারায় চড় বসাতে বলছে। সেই সাথে রাগে ফুসফুস করছে মেয়েটা। মেয়েটার দেয়া সাহস আর নিজের সকল ক্রুধ মিশিয়ে গাঁয়ের সকল শক্তি দিয়ে ঝড়ের মত পেছনে ঘুরেই চড় বসিয়ে দিলাম। প্রচণ্ড রাগে আমি কাপছি তখন। ঘটনার আকস্মিকটায় লোকটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে মনে হল। শুধু ছোট্ট করে বলল আমায় থাপড় মারলে কেন? বাসের সকল মানুষের চোখ তখন আমার রক্তিম চেহারার ধিকে। লোকটা এবার চোখ মুখ লাল করে বলল, এই মেয়ে আমায়...... নাহ লোকটা শেষ করতে পারেনি। সামনে বসা সেই মেয়েটি বিদ্যুৎ বেগে উঠে বলল, জানেন না কেন? আপনি উনার কোমরে হাত দিয়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছিলেন কেন? মেয়েটা আর কিছু বলতে হয়নি! ততক্ষনে বাসের ভেতরে ডিসুম ডিসুম শুরু হয়ে গেছে। বাস থেমেছে। নিজেকে বেশ হালকা লাগছে। দেখলাম মেয়েটার চোখ টলমল করছে। মাথায় হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

- কি ব্যাপার তুমি কাঁদছ কেন?

মেয়েটা নিচের দিকে মুখ করে বলল,

- আমি দুঃখিত আপু। - কেন? তুমি দুঃখিত হবে কেন!

- সরি আপু উনি আমার দাদা! 

মেয়েটা আমার হাত ধরে কেঁদে ফেলল। আমার নিজের চোখেও অশ্রু অনুভব করলাম। নিজের অজান্তেই মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরলাম।