প্রবাসে রোযা এবং ঈদ
ট্রেনে ইংল্যান্ড থেকে স্কটল্যান্ড যাচ্ছি। রমজান মাস। রোযা রেখেছি। যেহেতু ট্রেনেই ইফতার করতে হবে তাই ইফতারের জন্যে এক বোতল পানি, কয়েকটা খেজুর আর দুইটা পেয়ার নিয়েছি। ট্রেনে তেমন যাত্রী নেই বললেই চলে। ইফতারের সময় ঘনিয়ে এসেছে এমন সময় আমার পাশে বসা দুইজন মহিলার দিকে চোখ পড়ল। তারাও ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ভাঙা ইংরেজিতে জানতে চাইলেন আমি মুসলমান কি না। রোযা রেখেছি জেনে তাদের সাথে ইফতারের জন্যে বললেন। কথা বলে জানতে পারলাম, তারা ইরান থেকে এসেছেন।
ওয়েলসে আমি যেখানে থাকি সেখানে বাঙ্গালী তেমন না থাকলেও আফগানিস্থান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, ইরান এবং আফ্রিকার প্রচুর মুসলমান আছেন। তাই ঈদের দিনে নামাজ পড়তে গিয়ে মসজিদে এরাই আমার আপন জন। নামাজ শেষ হওয়ার পরেই ভিন্ন দেশের একজন ভাই যখন সালাম আর ঈদ মোবারক বলে বুকে টেনে নেয় তখন আল্লাহ্র রাসুলের বিদায় হজ্জের ভাষণের কথাই মনে পড়ে। মুসলমান মুসলমানের ভাই। সম্পূর্ণ অচেনা অজানা অপরিচিত একটা মানুষ যখন এভাবে পরম মমতায় বুকে টেনে নেয় তখন প্রবাসে আপন জন ছেড়ে ঈদ করার কষ্টটাই ভুলে যাই।
এখন পর্যন্ত প্রবাসের কোন ঈদেই আমি ডে অফ পাইনি। তবুও ঈদের জামাত পড়ে এসে বন্ধুদের সাথে সামান্য সময় হলেও কাটাতে চেষ্টা করি। অতঃপর ঘুম! বছরে দুটো দিন আছে যা আমি কখনোই চাইনা তার একটি ঈদ আর অন্যটি জন্মদিন। কেমন যেন খালি খালি লাগে সব। হতাশায় ভরে থাকে মন।
ঈদের দিনে কাউকে ফোন দিতে ভাল লাগেনা। মনে হয় সবাই আমাকে ফোন দিক, সবাই আমাকে বার্তা পাঠাক। বিশেষ করে পরিবারের সবাই। কিন্তু দেশে যারা আছেন তারা কখনোই আমার ঈদের দিনে আমাকে একবারের জন্যে ঈদ মোবারক বলে না। বলেন যে দিন দেশে ঈদ হয় সেই দিন। আমি প্রতিটা ঈদে মুবাইল নিয়ে অপেক্ষা করি, ফোন কিংবা বার্তা পাব না জেনেও করি। কিন্তু কখনও বলা হয়ে উঠে না, বলতে ইচ্ছে হয় না। শুধু মা’কে আমার ঈদের দিন ফোন দেই। জামাতে যাবার আগে বলে যাই। ঈদ মোবারক বলি, সালাম করি। তবুও জড়িয়ে ধরাটা হয় না, খুব মিস করি। আমি যখন মায়ের সাথে কথা বলি, চোখ দিয়ে পানি পড়ে মা’কে বুজতে দেইনা। অনেক গুলো ঈদ চলে গেল বাবার কবরের পাশে বসে মাটি ছুঁয়ে দেখিনা। দাঁড়িয়ে সালাম দেইনা।
যখন বুজতে শিখেছি তার পর থেকেই আর ঈদে নিজের জন্যে কিছু কিনি না। ভাল লাগেনা। তবুও ছোট বেলার ঈদের দিন গুলোর কথা খুব মনে পড়ে। নতুন জামা লুকিয়ে রাখা, নতুন জামার জন্যে কান্নাকাটি। খুব ভোরে পুকুরে গোসল না করলে যেন ঈদটাই হত না। তার পড় নতুন জামা পড়ে সবাইকে সালাম করা। এ বাসা ও বাসা ঘুরে ঘুরে মজার মজার খাবার খাওয়া। ঈদ আসলেই মা সাতকরা দিয়ে ঘরুর মাংস রান্না করতেন। সাথে চালের গুড়ির পিটা (চাপাতি)। এখনও মা রান্না করেন। শুধু আমার খাওয়া হয়না।
আর কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে না। গাল বেয়ে পানি গুলো কি বোর্ডে পড়ছে। আজ এখানেই থাকুক। আমার ঈদ গুলো এমনই কাটুক।