কিশোর রহস্য উপন্যাস : ডার্ক স্টার

31/05/2013 00:26

 


মূল লেখকঃ মেলানী জয়েস

অনুবাদঃ সালাহ্ আদ-দীন


এক
হঠাৎ করে টেইলরের ঘুম ভেঙ্গে গেল। স্বপ্নটা সে এখনও খুব ভাল করে মনে করতে পারছে। কেউ একজন তাঁকে বার বার চিৎকার করে বলছিল, চাবিটা দিয়ে দে! চাবিটা দিয়ে দে!! কিন্তু সে বুজে পায়না এখানে ভয় পাওয়ার কি হল। এটা তো একটা দুঃস্বপ্নই মাত্র! টেইলর এবার বালিশের নিচে হাত রাখে। নাহ! রুপার তৈরি তার প্রিয় তারাটা টিক জায়গাতেই আছে।

তারাটা হাতে নিতেই তার দাদীর কথা মনে পড়ে গেল। তার সপ্তম জন্মদিনে দাদি এটি তাকে উপহার দিয়েছিলেন। মনটা খুশিতে ভরে উঠে তার। আসলেই এই তারাটা সবসময় তার মন ভাল করে দেয়। হ্যা, মনে পড়েছে। আজ তার তের তম জন্মদিন। জীবনের এত প্রিয় একটি দিন সেকি ভুলে থাকতে পারে?

ঘর থেকে বের হয়েই আব্বু আর আম্মুর উইশ পায় টেইলর। ঠিক অন্য বছর গুলোর মতোই। অতঃপর মা তার হাতে একটা চিটি ধরিয়ে দেন। “এটি তোমার দাদি তোমার জন্যে লিখেছিলেন,” বললেন টেইলরের বাবা। “তিনি মারা যাবার আগে এটি লিখেছিলেন কিন্ত আমাদেরকে বলেছিলেন আমরা যেন টিক আজকের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করি”।

টেইলর এবার চিঠি নিয়ে তার ঘরে চলে আসে। পড়তে শুরু করে টেইলর……..

প্রিয় টেইলর!
এখন তোমার জানার সময় হয়েছে তোমার পরিচয়। আসলে তুমি কে? কি তোমার আসল পরিচয়? পৃথিবীর আজ বিষণ বিপদ। খুব শিগ্রই শয়তান সমস্ত পৃথিবী দখল করে নেবে।

আজ তোমার তের বছর বয়স পুরা হয়েছে। আজ তোমার দায়িত্ব এদেরকে ধ্বংস করার। আমি যে তারাটা তোমাকে দিয়ে ছিলাম, সেটা আসলেই একটি বিশেষ কিছু! এটি আসলে একটি চাবি।

আজ ভোর হবার আগেই যা করার করতে হবে। তুমি কি পুরাতন রাজবাড়ী চেন? সেখানে গেলে তুমি অনেক গুলো পাথর দেখতে পাবে। আলটা নামের যে পাথরটা দেখবে চাবিটা সেই পাথরটাতে কাজ করবে। অ্যালটিয়া তোমাকে সাহায্য করবে। ব্যাপারটা আর কাউকে বলবেনা। বাবা মাকেও না!
যত তাড়াতাড়ি পার বের হয়ে যাও। হাতে সময় একেবারেই কম।

তোমার দাদী।

টেইলর বেশ মনযোগ দিয়ে চিঠিটা আরও একবার পড়েনিল। একটু আগে দেখা স্বপ্নটার কথা মনে পড়েগেল তার। কেউ কি তার কাছে চাবি চেয়েছিল? আর আলটা নামের পাথরটাই বা আসলে কে? খুব তাড়াতাড়ি রহস্যটা উদঘটন করা চাই। মনে মনে ভাবল টেইলর।

সন্ধ্যা হওয়ার আগেই টেইলর বেড়িয়ে পড়লো। তাদের বাড়ি থেকে দাদী যে রাজবাড়ীর কথা বলেছেন তার দুরত্ব প্রায় ২০০ মাইল হবে। মনে মনে ভাবল ট্রেনে যাওয়া যেতে পারে। আব্বু আম্মুর কথা মনে পড়ে গেল তার। তারা হয়তো মনে করবেন সে হারিয়ে গেছে কোথাও। অনেকটা নিখুজ বলে যাকে। কিন্তু টেইলরের এত সব চিন্তা করার সময় নেই। আগে পৃথিবীর জন্যে কিছু একটা করতে হবে।

টেইলর তার ফ্রেন্ড অ্যালটিয়াকে ফোন করল। ব্যাপারটা যত সংক্ষেপে পারে অ্যালটিয়াকে বুজিয়ে বলে তাড়াতাড়ি আসতে বলল।

ফোনটা সামনের পকেটে রেখে সোজা হাটা শুরু করল সে। ইতঃমধ্যেই চারপাশ অন্ধ্যকার হয়ে এসেছে। সরু রাস্তা। কেমন ভূতুড়ে ভূতুড়ে লাগছিল তার কাছে। সে পাহাড়টাকে সামনে রেখেই হাঁটছিল। ট্রেন স্টেশনটা ঐ দিকেই। কাছে চলে এসেছে ও। এখান থেকে মেইন রাস্তায় উঠে সামান্য সময় হাটলেই ট্রেন স্টেশন। মেইন রাস্তায় উঠার পর চারদিক একটু মাথা ঘুরিয়ে দেখে নিল টেইলর। সাথে স্কুলের ব্যাগটা নিয়েছে ও। তারার সাথে একটা ম্যাপ আর বাবার হাই বোলটেজের টর্চ লাইতটাও স্থান পেয়েছে পেছনে ঝুলে থাকা ব্যাগে।



দুই
টেইলর একটা ব্যাপার এখনও খেয়াল করেনি। দুজন লোক তাকে সেই সরু পথে থাকার সময় থেকেই ফলো করছিল। একটু যোরে হাটার চেষ্টা করলো টেইলর। ঠিক এই সমইয়েই ফোনটা বেজে উঠলো। নিশ্চয়ই অ্যালটিয়া হবে, মনে মনে ভাবল টেইলর। চারপাশ আরেকবার দেখে ফোনটা বের করলো টেইলর। নাহ! অপরিচিত কেউ হবে। নাম্বারটা আর কখনও খেয়াল করেনি সে।
- হ্যালো। অনেকটা আস্তে করেই বলল টেইলর।
ওপার থেকে একটি কর্কশ আর বিরক্তিকর আওয়াজ ভেসে এল,
- নিজেকে বেশ সাহসী ভাবতে শুরু করেছ নাকি? এখনও সময় আছে ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে যাও। না হয় এর পরিনতি হবে ভয়ংকর! কথাটা বলেই লাইনটা কেটে দিল অসভ্য লোকটা।
টেইলরের সমস্ত শরীর একদম ঠাণ্ডা হয়ে আসছিল। ভয়ে ভয়ে আরেক বার চার পাশ দেখেনিল সে। রাস্তার পাশেই কিছু লোকের জটলা দেখল সে। তাহলে কি ঐখান থেকে কেউ থাকে ফলো করছে? জটলার পাশেই কালো আলখল্লা পরা লম্বা একজন মহিলাকে লক্ষ্য করল টেইলর। সাথে মনে হয় খাট একজন পুরুষও আছে। তারা নড়াচড়া করছে বলে মনে হয়না। তবে মনে হলো মহিলাটি তাকে লক্ষ্য করে হাত নাড়াল। টেইলরের ফোনটা আবার বেজে উঠলো।
- এখনও সময় আছে তারাটা আমাদেরকে দিয়ে দাও বলছি। এবার কণ্ঠটা আরও কর্কশ শুনাল টেইলরের কাছে।

টেইলর জানে পালানু ছাড়া তার কাছে আর কোন পথ খোলা নেই। খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিল টেইলর। পালাতেই হবে। পাহাড়ের পাশ ঘেশে যাওয়া সরু আর খুব দ্রুত নিচের দিকে নেমে যাওয়া রাস্তাকেই বেচে নিল টেইলর। পাশের মানুষের জটলাকে পেছনে ফেলে টেইলর দ্রুত নিচে নামার চেষ্টা করলো। ভয়ে টেইলর একবার পেছনে তাকালো। নিশ্চিত হতে চাইল মহিলাটি তাকে ফলো করছে কি না। দ্রুত দৌড়াতে গিয়ে কিছু একটার সাথে ধাক্ষা খেয়ে পড়ে গেল। উঠে দাড়ানুর চেষ্টা করলো টেইলর। কিন্তু কে যেন তাকে চেপে ধরল। “সব কিছু ঠিক আছে! সব কিছু ঠিক আছে!!” কণ্ঠটি আশ্বস্ত করতে চাইলো। কণ্ঠটা টেইলরের কাছে পরিচিত মনে হল। হ্যা, অ্যালটিয়া।
- চল এই পথে চল। বলল অ্যালটিয়া।
রাস্তাটা সরু হয়ে পাহাড়ের গা ঘেসে নিচে নেমে গেছে। যেখানে অ্যালটিয়া তার কার রেখেছে টিক সেই কার পার্কে গিয়ে শেষ হয়েছে। টেইলর আর অ্যালটিয়া অনেকটা দৌড়ে গিয়ে কারের ভিতরে ডুকে দরজা লক করে দিল।

- আমরা কি কারেই যাচ্ছি। অনেকটা হাপাতে হাপাতে প্রশ্ন করল টেইলর।
- হ্যা, এছাড়া অন্য কোন উপায় ঠিক এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই। ট্রেনে গেলে এরা সহজেই আমাদের ধরে ফেলতে পারবে।
টেইলর আরেকবার পেছনটা দেখেনিল।
- নাহ! কেউ আর আমাদের ফলো করছেনা।
- আমি সত্যিই দুঃখিত টেইলর, হঠাৎ করে তোমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলাম বলে। আসলে আমি তোমার নিরাপক্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম। শয়তান গুলো খুব ভাল করে জানে তুমি কে! তারা তোমাকে অবশ্যই থামাতে আসবে। আমাদের কে সূর্যাস্তের পূর্বেই রাজ বাড়িতে পৌছে তাঁরাটা যথা স্থানে স্থাপন করতে হবে।
- একজন মহিলা আর একজন পুরুষ আমাকে ফলো করছিল। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে এদের কাছে আমার মোবাইল নাম্বারটাও আছে।
অনেকটা স্বাবাবিক হয়ে আসছে টেইলর।
- আসলে এরা নিরীহ মানুষ। শয়তান এদের উপর কর্তিত্ব স্থাপন করে নিজেদের ইচ্ছা মত পরিচালিত করছে। তারা আসলেই বুজতে পারেনা তারা কি করছে। তুমিই পার এই নিরীহ মানুষ গুলকে শয়তানদের হাত থেকে উদ্ধার করতে।

টেইলর একটু একটু ভয় পাচ্ছিল, তাই চুপ করে বসে থাকল।


তিন
টেইলরের মোবাইল আবার বেজে উঠল। মনে হয় কেউ বার্তা পাঠিয়েছে। হ্যা, তার ধারনাই ঠিক। সেই আগের অপরিচিত নাম্বার থেকে বার্তা এসেছে। “পালানোর চেষ্টা করোনা”। ইতঃমধ্যেই তারা গ্রামের সরু রাস্তা ছেড়ে হাই ওয়েতে উঠলো। মনে হয় সূর্য বাবু ডুবে যাচ্ছে! চার দিকের বিদঘুটে অন্ধ্যকার একটি দীর্ঘ রাতের জানান দিল। অনেক্ষন চলার পর তারা একটা মেটু পথে প্রবেশ করল। সন্ধ্যা থেকেই আবহাওয়া খারাপ ছিল। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি কারের সামনের গ্লাসকে একটু পরে পরেই আবৃত করে দিচ্ছিল। এদিকের রাস্তায় কোন লাইট নেই। মাঝে মাঝে রাস্তার পাশের শেয়াল গুলোর চোখ জ্বলে উঠছিল গাড়ির হেড লাইটের আলোতে। এভাবে প্রায় ঘণ্টা খানেক চলে গেল।

নাহ! কেউ আর আমাদের ফলো করছেনা। মনে মনে ভাবল টেইলর। আর কোন বার্তাও এলো না মোবাইলে। টেইলরের ঘুম ঘুম করছিল। একটু একটু ঘুম আসছিল মনে হয়। আবার সেই দুঃস্বপ্ন। মোবাইলের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল টেইলরের। “আমরা কখনোই তোমাদের ইচ্ছা পূর্ণ হতে দেবনা”। মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো শয়তান গুলোর চেহারা।
- ওহ্! নো!! অনেকটা হতাশ ভাবে বলে উঠলো টেইলর।
- কি হয়েছে? জিজ্ঞেস করলো অ্যালটিয়া।
- ওরা আমাদের আবারও ফলো করছে!

হঠাৎ করে পেছন থেকে গাড়ির হেড লাইটের আলো আর বিকট হর্ন শুনতে পেল টেইলর। বড় চাকার একটি জিপ টিক তাদের পেছনে। বার বার চেষ্টা করছিল তাদেরকে ওভার টেক করার।
- ওহ্! এরাই আমাকে ফলো করছিল অ্যালটিয়া। অনেকটা কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো টেইলর।
- ভয়ের কিছু নেই। সাহস দিতে চাইল অ্যালটিয়া।

তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। পেছন থেকে বিশাল জীপটির প্রচণ্ড ধাক্ষায় টেইলরদের কার রাস্তার নিচে খাদে পড়ে গেল। রাস্তা থেকে অনেক নিচে পড়েছে গাড়িটা। টেইলর দরজা খুলে কোন রকমে বের হতে পারলেও অ্যালটিয়া আঠকে গেল। তার পা কিছু একটার সাথে আঠকে গেছে। টেইলর এগিয়ে গেল,
- আমি তোমাকে সাহায্য করছি। বের হয়ে আস।
- এরা আমাদের ফলো করে এখানে নেমে আসতে পারে। কাজেই খুব দ্রুত এখান থেকে তোমাকে পালাতে হবে টেইলর। আমরা কাছাকাছি চলে এসেছি। তুমি পালও। আমি নিজেকে দেখছি।

টেইলর কোন ভাবেই চাচ্ছিল না অ্যালটিয়াকে ফেলে যেতে। কিন্তু এছাড়া তার কাছে আর কোন উপায়ও ছিল না। সূর্যাস্তের আগেই পাথরটিতে তারাটি স্থাপন করতে হবে তাকে। অ্যালটিয়ার দিকে তাকাল টেইলর। অ্যালটিয়া একটু হেসে টেইলরকে আস্বস্ত করতে চাইল।

টেইলর দ্রুত সরে আসলো কারের কাছ থেকে। সত্যিই যদি লোক গুলো আমাদের ফলো করে থাকে তাহলে এখনি এরা চলে আসবে! মনে মনে ভাবল টেইলর। সাবধানে চার দিকে চোখ ভুলিয়ে নিল আরেক বার।


চার
জায়গাটা অসম্বভ রকমের অন্ধকার। এদিকে আসে পাশে কোথাও ঘর বাড়ি আছে বলে মনে হয়না। একটি শেয়ালের ডাক আর রাত জাগা পাখির কিচির মিচির ছাড়া তেমন কোন শব্দও কানে এলো না। আকাশ থেকে মেঘ কিছুটা সরে গেছে। চাঁদের আবছা আলোয় সরু একটা রাস্তা দেখতে পেল টেইলর। দুরের উচু পাহারটির দিকে চলে গেছে রাস্তাটি। ব্যাগ থেকে তারা আর টর্চ লাইটটা হাতে নিল টেইলর। তারাটা রাখল প্যান্টের সামনের পকেটে। আসলে টেইলর ভাবছিল যদি আবার এরা তার পিছু নেয় তাহলে হাতের ব্যাগটা ফেলে দিয়ে শত্রুর চোখে আঙ্গুল দেয়া যাবে।

হঠাৎ করে টেইলর নিজেকে অনেকটা সাহসী ভাবতে শুরু করল। ভিতর থেকে কে যেন তাকে শক্তি যুগাচ্ছিল। টেইলটা অনুসরণ করে দ্রুত হাঠছে টেইলর। মাঝে মাঝে পাতার মরমর শব্দে কান খাড়া করে পরিস্তিতি অনুমান করার চেষ্টা করছে। লাইট ব্যাবহার করছেনা টেইলর। টেইলর খুব ভাল করে জানে অন্ধকার রাতে শত্রু যখন পাড়ায় পাড়ায় লাইটের ব্যাবহার তখন আত্মঃগাতি। মাঝেমাঝে রাস্তার গর্ত আর পাথরের টুকরা পায়ে লাগছিল টেইলরের।

হঠাৎ কাদামাটিতে পা ফসকে পড়ে গেল টেইলর। কোন রকম দ্রুত উঠে দাঁড়াল টেইলর।

পকেটে হাত দিয়ে চমকে উঠল সে। তারাটা পকেটে নেই! অন্ধকারে হাতড়ে ঘাসের উপস্তিতি ছাড়া আর কোন কিছুই পেল না টেইলর। তারা ছাড়া সব কিছুই অনর্থক। তাহলে কি সে সফল হতে পারল না তার মিশনে। হতাশায় কুঁকড়ে যাচ্ছিল টেইলর। ঘাসের উপর বসে পড়ল টেইলর। তার থেকে কিছুটা দূরে কিছু একটা চকচক করতে দেখে চমকে উঠল টেইলর। । ভাল করে খেয়াল করল সে। হ্যা! তারাটাই তো। হাফ ছেড়ে বাঁচল টেইলর। আসেপাশেই কিছু একটা নড়েচড়ে উঠলো। দ্রুত পেছনে সরে এসে সামনে তাকাল টেইলর। তার থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে দাদির বলা সেই পাথর গুলো দেখে আনন্দে চিৎকার দিয়ে উঠলো টেইলর নিজের অজান্তেই। এরকম পাথর আর আগে কখনও দেখেনি টেইলর। অ্যালটা নামের পাথরটাকে গিরে মোট তেরটি পাথর বৃক্তাকারে দাড়িয়ে আছে। মনে হয় না আসে পাশে কেউ তাকে ফলো করছে। সূর্য উদয়ের আর তেমন দেরি নেই। তাই সময় নষ্ট করতে চাইলো না টেইলর।

পাঁচ
বিশাল অ্যালটা নামের পাথরটি মাঝ খানে অনেকটা শুয়া অবস্তায় ছিল। টেইলর লক্ষ্য করলো পাথরটির ঠিক বুক বরাবর তারা আকৃতির একটি গর্ত। বুঝতে আর বাকি রইলনা টেইলরের। পকেটে হাত দিয়ে তারাটি বের করে টেইলর এগিয়ে গেল পাথরতির দিকে। পাথরের আড়াল থেকে কাল পোশাক পড়া কে যেন দ্রুত বেরিয়ে এলো। দাড়াও চিৎকার করে উঠলো মূর্তিটি। ভয়ে টেইলর একদম শিতল হয়ে গেল। এ তো সেই মহিলা, যে তাকে বার বার ফলো করে আসছে! সে এবার খুব ভাল করে দেখতে পেল নীল চোখের কাল আলখাল্লা পরা মহিলাটিকে। আগ থেকে অনেক লম্বা দেখাচ্ছে মহিলাটিকে। লম্বা লম্বা দাত আর হাতের নখ গুলো স্পষ্ট দেখতে পারছে টেইলর। মুখ থেকে বার বার আগুনের ফুল্কির মত কিছু একটা বের হচ্ছিল। মনে হয় জিহ্বা হবে। সেই ক্ষুদ্র মানুষটাও সাথে আছে মহিলাটির।

- তারাটি আমাদেরকে দিয়ে দে। কর্কশ আর হুংকার দিয়ে নির্দেশ দিল অভদ্র মহিলাটি।
- অসম্ভব! চিৎকার করে উঠল টেইলর। আমি এত দূর আসিনি তোমাকে এটা দিয়ে দেওয়ার জন্যে।
- হ্যা…….হ্যা……..হ্যা………আকাশ ফাটিয়ে হেসে উঠল মহিলাটি।

টেইলর লক্ষ্য করলো হাসার সময় মুখ, নাখ আর কান দিয়ে আগুনের ফুলকি জ্বরে পড়ছিল মহিলাটির। টেইলর পালাতে চেষ্টা করলো কিন্তু মহিলাটি প্রায় দশ ফুট দূর থেকে হাত দিয়ে চেপে ধরল টেইলরকে। এবার টেইলরের পা নড়ানুর শক্তিটুকুও রইলনা। চেষ্টা করে কাঁদতেও পারলনা টেইলর। প্রচণ্ড ধাক্ষায় হাতের তারাটা ফসকে পড়ে গেল টেইলরের। ক্ষুদ্র মানুষটি সামনে এগিয়ে এলো অনেকটা রোবটের মত। মনে হয় ঘুমের মধ্যে মানুষ যে রকম হাঠে সে রকম করেই হাঠছে। তারাটা কুড়িয়ে নিয়ে মহিলাটির দিকে গেল ক্ষুদ্র মানুষটি। টেইলর একটুও নড়তে পারছিলনা। আর কোন সুযোগ নেই, আমি হেরে গেলাম! মনে মনে ভাবল টেইলর।

হঠাৎ করে ক্ষুদে মানুষটি পেছন থেকে কিছু একটির ধাক্ষায় সামনের দিকে মুখ তুবড়ে পড়লো। তারাটি হাত থেকে ফসকে সামনের ঘাসের মধ্যে পড়ল। টেইলর দেখতে পেল অ্যালটিয়াকে। সূর্য তখন উঠতে শুরু করেছে।
বিশাল দৈত্য আকৃতির মহিলাটি এবার অ্যালটিয়ার দিকে ফিরে তাকাল। টেইলরকে ছেড়ে দিয়ে লম্বা হাত দিয়ে অ্যালটিয়াকে অনেকটা শূন্যে তুলে ধরল মহিলাটি।

- চাবিটা স্থাপন কর! চিৎকার করল অ্যালটিয়া।
দাত দিয়ে কামড়ে ধরেছে অ্যালটিয়া দৈত্যটির হাতে। অ্যালটিয়াকে ছেড়ে দিল মহিলাটি। টেইলর দ্রুত এগিয়ে গিয়ে তারাটি হাতে নিয়ে নিল। লড়াইটা এবার জমে উঠেছে মহিলা আর অ্যালটিয়ার মধ্যে। এইতো সুযোগ, ভাবল টেইলর। টেইলর দ্রুত তারাটি পাথরে স্থাপন করলো। অনেকটা আঠালো ভাবে আটকে গেল তারাটি। এবার টেইলর সকল শক্তি দিয়ে তারাটি গুরাল।

একদম নিরবতা নেমে এলো চারদিকে। টেইলর অনেকটা ভূমিকম্পের মতো অনুভব করল। কম্পনটা যেন বেড়েই চলেছে। অ্যালটিয়াকে ছেড়ে মহিলাটি নিজের কানে হাত দিয়ে চিৎকার করলো,
- বন্ধ কর!!
ক্ষুদ্র লোকটিকে আর আসেপাশে দেখলনা টেইলর। শুধু অ্যালটিয়াকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখল।
- অ্যালটিয়াকি মারা গেছে? মনে মনে ভাবল টেইলর।
টেইলর চেষ্টা করেও নড়তে পারলনা। তারা থেকে প্রচণ্ড আলোক বিচ্ছুরনে কিছুই আর দেখতে পেলনা টেইলর। চোখ বন্ধ করল টেইলর।

হঠাৎ টেইলরের চোখ খুলে গেল। টেইলর জানে এখন তাকে কি করতে হবে। সে ধিরে ধিরে মহিলাটির দিকে এগিয়ে গেল। অনেকটা মৃত অবস্থায় পড়ে ছিল ঘাসের উপর। টেইলর মহিলাটির মাথা কোলে নিয়ে গভীর ভাবে মহিলাটির চোখের দিকে তাকাল। তার চোখ থেকে বের হওয়া আলোক রশ্মি মহিলাটির সমস্ত মুখ আলকিত করে তুলল। একটু পরেই চোখ খুলল মহিলাটি।
- আমি কোথায়? আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করল মহিলাটি।
টেইলরও আশ্চর্য কম হয়নি। দৈত্য আকৃতির মহিলাটি দেখতে অসাধারণ। পূর্বের চেহারা ফিরে পেয়েছে সে!
- এখন নয়, পরে বুজিয়ে বলব আপনাকে। বলল টেইলর।

অনেকটা দূরে ক্ষুদে লোকটাকেও দেখতে পেল টেইলর। সমান ঘটনা গঠল লোকটার ক্ষেত্রেও। সেও কিছু মনে করতে পারছেনা।

অ্যালটিয়া ইতঃমধ্যে উঠে দাঁড়িয়েছে। পূবের আকাশে সূর্য উঠেছে। চলে গেছে পৃথিবীর সকল অন্ধকার।নতুন আরেকটি দিনের সুচনা হল।

- চল! বাড়ি ফিরতে হবে!! তাড়া দিল অ্যালটিয়া।

টেইলরের বাড়ীর কথা মনে পড়ে গেল। বাবা-মা, স্কুল, খেলার মাঠের সকল বন্ধু সকলের কথা। সবকিছু কেমন স্বপ্নের মত মনে হল টেইলরের।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই খবরের কাগজ খুলল টেইলর। পুরো খবরের পাতা জুড়েই সকল আজব আজব খবর। শহরের অনেক লোকেরই নাকি চেহারা বদলে গেছে। অনেক লোককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আরও কত কি…………।