এসো কোরআন বুঝি-৪
সুরা হাসরের শেষ তিন আয়াতঃ
তিলাওয়াতঃ
শুরু কথাঃ
আগের দুই পর্বে আমরা সুরা ইখলাস এবং সুরা বাকারার ২৫৫ তম আয়াত তথা আয়াতুল কুরসি অধ্যায়ন করেছি! এই দুটো পর্বই অধ্যায়নের মূল লক্ষ্য ছিল আমরা যে আল্লাহ্র ইবাদত করি তার পরিচয় জানা! যেন আমরা তাঁকে ভাল করে জেনে শুনেই তার ইবাদত করতে পারি! আজকের পর্বেও আমরা এ রকমই কয়েকটি আয়াত অধ্যায়ন করব যেখানে আল্লাহ্ নিজে তার পরিচয় বর্ণনা করেছেন!
এই আয়াত গুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ
এই আয়াত গুলোর বিষয়বস্তু এবং বাচনভঙ্গি অনেকটা মাক্ষি সুরার মতই! তবে এই আয়াত এগুলো নাযিল হয়েছে মদিনাতে! হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি আউজুবিল্লাহ্ এবং বিসমিল্লাহ্” পাঠকরার পর এই আয়াত গুলো পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য ৭০হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করে দিবেন, তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঠকারীর জন্য রহমতের দোয়া করবে। যেদিন এই আয়াত তিনটি পাঠ করবে সেদিন পাঠকারী মারা গেলে শাহদাত মৃত্যুর মর্যাদা লাভ করবে। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এভাবে পাঠ করবে সেও একই সওয়াব লাভ করবে। (তিরমিজী)
এ আয়াত গুলো অধ্যায়ন করে আমরা যা যা জানতে পারবঃ
ক) আল্লাহ্ কে? কি তার পরিচয়?
খ) আল্লাহ্র বেশ কিছু গুন বাচক নাম যা দিয়ে আমরা তাঁকে চিনতে পারব
গ) কিছু মানুষ যারা তার সাথে অন্য কিছুর তুলনা (শিরক) করে তিনি তার সব কিছু থেকেই পবিত্র
সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের বাংলা অনুবাদঃ
তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তিনি গোপন এবং প্রকাশ্যের সব কিছু জানেন, তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা। (২২)
তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তা দানকারী, আশ্রয়দাতা, পরাক্রমশালী, সবার উপরে বিজয়ী, শক্তিবলে নিজের নির্দেশ কার্যকর করতে সক্ষম। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা’ আলা তা থেকে পবিত্র।(২৩)
তিনিই আল্লাহ তা’আলা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নাম সমূহ তাঁরই। নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।(২৪)
এ আয়াত গুলোর অনুবাদ পড়ে আমাদের মনে যে কয়টি প্রশ্ন জাগে তা হলঃ
ক) আল্লাহ্ গোপন এবং প্রকাশ্য জানেন বলে কি বুঝাতে চেয়েছেন?
খ) আল্লাহ্র সাথে অংশীদার করা বলতে আল্লাহ্ কি বুঝিয়েছেন?
উপরের আয়াত গুলো পড়ে আমরা যা বুঝতে পারিঃ
১। হাদিসে এসেছে আল্লাহ্র মোট ৯৯ টি নাম রয়েছে। এই আয়াত গুলোতে আল্লাহ্ তার কিছু নামের উল্ল্যেখ করেছেন। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনিই একমাত্র সত্তা যার ইবাদত করতে হবে! আর তিনি এমন এক সত্তা যিনি সৃষ্টির সকল গোপন এবং প্রকাশ্যের সব কিছু জানেন! এখনে সংক্ষেপে একটা ব্যাপার বলে নেয়া ভাল, যে আল্লাহ্ মানুষকে যা জানিয়েছেন তা ছাড়া আমরা আর কিছুই জানিনা! আর গায়েব একমাত্র আল্লাহ্ জানেন আর কেউ নয়! আর পীর ফকির যারা গায়েব জানে বলে দাবি করে তারা সকলেই ভণ্ড! গায়েব জানা আল্লাহ্র নিজের বৈশিষ্ট অন্য কারো নয়। আমরা সকলেই তার দয়া এবং দানের মুখাপেক্ষী!
২। ২৩তম আয়াতে আল্লাহ্ নিজেকে মালিক হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন। অর্থাৎ সৃষ্টির সব কিছুর মালিক তিনি। তিনিই বাদশাহ! এই সব কিছু তার হুকুমেই চলে! আল কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় তিনি তার এই মালিকানা স্পষ্ট করেই বর্ণনা করেছেন, আসমান এবং জমিনে যা কিছু আছে তার সব কিছু তারই মালিকানাধীন, সবই তার নির্দেশের অনুগত্য! (সূরা রোম-২৬); আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত সব কিছুর ব্যাবস্তাপনা তিনিই করে থাকেন। (সূরা সিজদাহ-৫)
এর পরেই তিনি সকল মন্দ এবং খারাপ থেকে নিজেকে পবিত্র ঘোষণা করেছেন! অতঃপর তিনি নিজের জন্যে সালাম শব্দ ব্যাবহার করে বিপদ, দুর্বলতা, অপূর্ণতা থেকে তিনি যে মুক্ত ত স্পষ্ট করেছেন। এছাড়া তিনি নিরাপত্তা দানকারী, আশ্রয়দাতা, পরাক্রমশালী, সবার উপরে বিজয়ী, শক্তিবলে নিজের নির্দেশ কার্যকর করতে সক্ষম।
৩। আল্লাহ্ তার সাথে কাউকে শরিক করা বা তার সমুতুল্য ভাবাকে শিরক হিসাবে চিহ্নিত করছেন! অর্থাৎ আল্লাহ্র যে ৯৯টি গুনবাচক নাম আছে সেই নামে অন্য কাউকে ডাকা বা ঐ গুনে গুণান্বিত ভাবাকেও শিরক বলা হয়েছে। তিনি এসব থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র এবং কেউ তার সাথে কিছু শরিক করলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন। এখানে সংক্ষেপে একটি কথা বলে নেয়া ভাল, অনেকের নাম আবদুল কুদ্দুস, আব্দুস সালাম থাকে। তাদেরকে ডাকার সময়ে অবশ্যই শুধু কুদ্দুস বা সালাম না ডেকে সম্পূর্ণ নামেই ডাকা উচিৎ! আমরা অনেকে না জেনেই এই ধরনের শিরক করে থাকি।
৪। তিনিই আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, সকল প্রশংসার যোগ্য একমাত্র তিনিই, জগতের সব কিছু তার নামে তাসবিহ্ করে।
এই আয়াত গুলোর শিক্ষাঃ
সুরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসি এবং সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত অধ্যায়নের পর এখন আমরা খুব ভাল করে জানি আমরা কোন রবের ইবাদত করি, কি তার পরিচয় এবং কেন শুধু মাত্র তাকেই উপাস্য করা উচিৎ! আসুন আমরা আল্লাহ্কে ঠিক এই ভাবেই জানি এবং অন্যদেরকেও তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই ঠিক এই ভাবেই!