এসো কোরআন বুঝি-১

09/05/2013 00:35

 সূরাঃ আল-আসর


 

তিলাওয়াতঃ 

সূরা আসরের সংকিপ্ত পরিচয়ঃ
এটি আল কোরআনের ১০৩ তম সূরা। আয়াত সংখ্যা ৩, সূরাটি মাক্ষী সুরার অন্তর্ভুক্ত। এ সুরায় সম্পূর্ণ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মানুষের সাফল্য ও কল্যাণের এবং তার ধ্বংস ও সর্বনাশের পথ বর্ণনা করা হয়েছে। ইমাম শাফেঈ যথার্থই বলেছেন , লোকেরা যদি এই সূরাটি সম্পর্কে চিন্তা - ভাবনা করে তাহলে এই একটি সূরাই তাদের হেদায়াতের জন্য যথেষ্ট।
 
সূরা আসরের বাংলা অনুবাদঃ
১ সময়ের কসম!
২ নিশ্চয়ই মানুষেরা বড় ক্ষতির মধ্যে রয়েছে,
৩ তবে তারা ব্যাতিত যারা ঈমান এনেছে, ভাল কাজ করে, একে অপরকে হক কথা বলা এবং ধৈর্য ধরার উপদেশ দেয়।
 
এ সুরার বাংলা অনুবাদ পড়ে আমাদের মনে কয়েকটি প্রশ্ন জাগে আর তা হলঃ
১ আল্লাহ্‌ তো আমাদের সবকিছুর মালিক তিনি যা বলবেন তাই তো সত্য। তাহলে তিনি এখানে কসম করে বলছেন কেন?
২ এত কিছু থাকতে তিনি সময়ের কসম করলেন কেন?
৩ ঈমান কি এবং কিসের উপর ঈমান আনতে হবে?
৪ এখানে ভাল কাজ বলতে কোন কাজের কথা বুঝানো হয়েছে?
৫ হক কথা কি?
৬ ধৈর্য ধরার উপদেশ দিতে হবে কেন?
 
এবার অতি সংক্ষেপে নিচে উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছিঃ
১ আল কোরআনের বিভিন্ন সূরার শুরুতে আল্লাহ্‌ পাক রাব্বুল আলামীন কসম করেছেন । এ ব্যাপারটা বিভি¬ন্ন তাফসীরবিদগন বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তবে অনেকের মতে, আল্লাহ্‌ বলেছেন তিনি কোরআন নাযিল করেছেন সহজ ভাষায়, সাধারন মানুষ যেহেতু কোন কিছু কসম করে বললে তা সহজেই আমলে নেয় এবং বিশ্বাস স্থাপন করে, তাই আল্লাহ্‌ এখানে কসম করে বলছেন।
 
২ এখানে সময়ের কসম করে আল্লাহ্‌ অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সময়কে বুঝিয়েছেন
 
৩ ঈমান শব্দটি কোরআন মজীদের কোন কোন স্থানে নিছক মৌখিক স্বীকারোক্তির অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তবুও আসল ব্যবহার হয়েছে সাচ্চা দিলে মেনে নেয়া ও বিশ্বাস করা অর্থে ৷ আরবী ভাষায়ও এই শব্দটি এই অর্থেই ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ ঈমান বলতে ইসলামে যেসকল বিষয়ের উপর ঈমান আনতে বলা হয়েছে সে সকল বিষয়েকে মনে প্রানে বিশ্বাস করা এবং দৈনন্দিন কাজে তার বাস্তবায়নকে বুঝানু হয়েছে।
 
যে সকল বিষয়ের উপর ঈমান আনতে হবে-
আল্লাহ এক, তিনি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নাই এবং হযরত মুহাম্মদ (সা:) তাঁর বান্দা ও রাসূল;
             • ফেরেস্তাদের উপর
             • আল্লাহ্‌র প্রেরিত নবী ও রাসুলদের প্রতি
             •নবীদের উপর বিভিন্ন সময়ে নাযিল কৃত কিতাবের উপর
             •আখেরাতের উপর
             •তকদীরের (ভাগ্যের) ভাল মন্দের উপর
             •মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের উপর
             •আল্লাহর বিধি-বিধানের উপর
 
৪ ঈমানের পরে মানুষকে ক্ষতি থেকে বাঁচাবার জন্য দ্বিতীয় যে গুণটি অপরিহার্য সেটি হচ্ছে সৎকাজ। এখানে সৎ কাজ বা ভাল কাজ বলতে কোরআন এবং হাদসের অনুসরনে জীবন যাপনের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
 
৫ হক শব্দটি বাতিলের বিপরীত। সাধারণত এ শব্দটি দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এক : সঠিক, নির্ভুল, সত্য, ন্যায় ও ইনসাফ অনুসারী এবং আকীদা ও ঈমান বা পার্থিব বিষয়াদির সাথে সম্পর্কিত প্রকৃত সত্য অনুসারী কথা। দুই : আল্লাহর, বান্দার বা নিজের যে হকটি আদায় করা মানুষের জন্য ওয়াজিব হয়ে থাকে। কাজেই পরস্পরকে হকের উপদেশ দেবার অর্থ হচ্ছে, ঈমানদারদের এই সামাজটি এমনি অনুভূতিহীন নয় যে, এখানে খারাপ লোকেরা মাথা উঁচু করতে এবং হকের বিরুদ্ধে কাজ করে যেতে থাকলেও লোকেরা তার নীরব দর্শক হয় মাত্র। বরং যখন ও যেখানেই খারাপ লোকেরা খারাপ কাজ করতে থাকে তখনই সেখানে হকের আওয়াজ বুলন্দকারীরা তার মোকাবেলায় এগিয়ে আসে, এই সমাজে এই প্রাণশক্তি সর্বক্ষণ প্রবাহিত থাকে। সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেই কেবল সত্যপ্রীতি ও সত্য নীতিও ন্যায় নিষ্ঠার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে না এবং হকদারদের হক আদায় করেই ক্ষান্ত হয় না বরং অন্যদেরকে এই কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করার উপদেশ দেয়। এই জিনিসটিই সমাজকে নৈতিক পতন ও অবক্ষয় থেকে রক্ষা করার জামানত দেয়। যদি কোন সমাজে এই প্রাণ শক্তি না থাকে তাহলে সে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে পারবে না। যারা নিজেদের জায়গায় হকের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে কিন্তু নিজেদের সমাজে হককে বিধ্বস্ত হতে দেখে নিরব থাকবে তারাও একদিন এই ক্ষতিতে লিপ্ত হবে। একথাটিই সূরা মায়েদায় বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে: হযরত দাউদ ও হযরত ঈসা ইবনে মারয়ামের মুখ দিয়ে বনি ইসরাঈলদের ওপর লানত করা হয়েছে। আর এই লানতের কারণ ছিল এই যে, তাদের সামজে গোনাহ ও জুলুম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং লোকেরা পরস্পরকে খারাপ কাজে বাধা দেয়া থেকে বিরত থেকেছিল ( ৭৮-৭৯ আয়াত )। অর্থাৎ ভাল কাজ করার পাশাপাশি সমাজে তা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে হবে।
 
৬ হক কথা বলার উপদেশের সাথে সাথে দ্বিতীয় যে জিনিসটিকে ঈমানদারগণকে ও তাদের সমাজের ক্ষতি থেকে বাচাঁর জন্য অপরির্হায শর্ত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে তা হচ্ছে, তারা একে অপরকে সবর করার উপদেশ দিতে থাকবে। অর্থাৎ হককে সমর্থন করতে ও তার অনুসারী হতে গিয়ে যেসব সমস্যা ও বাধা - বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয় এবং এপথে যেসব কষ্ট, পরিশ্রম, বিপদ - আপদ ক্ষতি ও বঞ্চনা মানুষকে নিরন্তর পীড়িত করে তার মোকাবেলায় তারা পরস্পরকে অবিচল ও দৃঢ়পদ থাকার উপদেশ দিতে থাকবে ৷ সবরের সাথে কিছু বরদাশত করার জন্য তাদের প্রত্যেক ব্যক্তি অন্যকে সাহস যোগাতে থাকবে।
 
সূরা আসরের শিক্ষাঃ 
এই সূরা অধ্যায়ন করে আমরা এটাই জানতে পারলাম যে, পৃথিবীতে একমাত্র সেই সকল মানুষেরা সফল এবং সঠিক পথে রয়েছে যারা চারটি গুণাবলীর অধিকারী : (১) ঈমান , (২) সৎকাজ , (৩) পরস্পরকে হকের উপদেশ দেয় এবং (৪) একে অন্যকে সবর করার উপদেশ দেয়।
আসুন আমরা আজ থেকে এ সূরাটি আমল করার চেষ্টা করি।