এসো কোরআন বুঝি-২

09/06/2013 00:48

সূরাঃ ইখলাস
Image may contain: text
 

 

তিলাওয়াতঃ

 

শুরু কথাঃ

আগের পর্ব-এ আমরা সূরা আসর নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। সূরা আসরে আল্লাহ্‌ ঈমান আনার কথা বলেছেন। ঈমান আনার কথা এলেই প্রথমে আল্লাহ্‌র উপর ঈমান আনার কথা আসে। এখন আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে আল্লাহ্‌ কে? কি তার পরিচয়? তিনি দেখতে কেমন? আমরা তাকে কিভাবে চিনব? আল্লাহ্‌ আল কোরআনে বেশ কয়েক জায়গায় নিজের পরিচয় দিয়েছেন খুব সুন্দর ভাবে। তার মধ্যে সূরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসি এবং সূরা হাসরের শেষ তিন আয়াত বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। আমরা আজকের পর্বে সূরা ইখলাস নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ্‌।

সূরা ইখলাসের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ
এ সূরাটি আল কোরআনের ১১২তম সূরা। যার আয়াত সংখ্যা ৪টি এবং এটি মাক্ষী সূরার অন্তর্ভুক্ত। আল কোরআনের বেশির ভাগ সূরার নামকরন সূরা থেকে নেয়া কোন একটি শব্দ দিয়ে হলেও এ সূরাটির নামকরন করা হয়েছে এর বিষয়বস্তুর উপর ভিক্তি করে। এ সূরায় আল্লাহ্‌ পাক রাব্বুল আলামীন মাত্র চার লাইনে তার নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন।

এ সূরা অধ্যায়ন করে আমরা যা যা জানতে পারবঃ
১। আমরা মুসলমানরা যে আল্লাহকে বিশ্বাস করি তিনি কে?
২। কি তার পরিচয়?
৩। তিনি কিসের তৈরি ? তাঁর বংশধারা কে ? তিনি কোন প্রজাতির অন্তরভুক্ত ?
৪। দুনিয়ার উত্তারাধিকার তিনি কার কাছ থেকে পেয়েছেন ?
এখানে উল্লেখকরা ভাল যে, এ সূরাটির নাযিলের অন্যতম কারন ছিল কাফেরদের করা এই প্রশ্ন গুলোর যথার্থ উত্তর দেয়া।

সূরা ইখলাসের বাংলা অনুবাদঃ
১। (হে নবী আপনি) বলুন, তিনি আল্লাহ, একক।
২। আল্লাহ কারোর ওপর নির্ভরশীল নন এবং সবাই তাঁর ওপর নির্ভরশীল।
৩। তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনি কারোর সন্তান নন।
৪। এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।

এ সূরার বাংলা অনুবাদ পড়ে আমাদের মনে যে কয়টি প্রশ্ন জাগে তা হলঃ
১। আল্লাহ্‌ এক বা একক মানে কি?
২। আল্লাহ্‌র এত নাম থাকতে এ সূরায় তিনি নিজেকে আহাদ নামে পরিচয় দিলেন কেন?

উপরের আয়াত গুলো পড়ে আমরা যা বুঝতে পারিঃ
১। আল্লাহ্‌ নিজেকে এখানে এক হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি এক বা অদ্বিতীয়। তার কোন সন্তান-সন্ততি নেই এবং তিনিও কারো সন্তান নন। তার পূর্বে কেউ ছিল না। তাকে কেউ সৃষ্টি করেনি বরং তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।

২। একক ও অদ্বিতীয় হওয়া আল্লাহর বিশেষ গুণ। বিশ্ব – জাহানের কোন কিছুই এ গুণে গুণান্বিত নয়। তিনি এক ও একক, তাঁর কোন দ্বিতীয় নেই।

২। কাফের বা অবিশ্বাসকারিরা সব সময় আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করত, তিনি (আল্লাহ্‌) কিসের তৈরি? তাঁর বংশধারা কে? তিনি কোন প্রজাতির অন্তরভুক্ত? দুনিয়ার উত্তারাধিকার তিনি কার কাছ থেকে পেয়েছেন? এবং তার পর কে এর উত্তরাধিকারী হবে? আল্লাহ তাদের এ সমস্ত প্রশ্নের জবাব একটিমাত্র "আহাদ" শব্দের মাধ্যমে দিয়েছেন। এখানে আহাদ শব্দটি ব্যাবহার করে মূলত নিচের বিষয় গুলোর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে:

(ক) তিনি এক আল্লাহ চিরকাল আছেন এবং চিরকাল থাকবেন। তাঁর আগে কেউ আল্লাহ ছিল না এবং তাঁর পরেও কেউ আল্লাহ হবে না।

(খ) আল্লাহর এমন কোন প্রজাতি নেই, যার সদস্য তিনি হতে পারেন। বরং তিনি একাই আল্লাহ এবং তাঁর সমগোত্রীয় ও সমজাতীয় কেউ নেই।

(গ) তাঁর সত্তা নিছক এক নয় বরং একক, যেখানে কোন দিক দিয়ে একাধিক্যের সামান্যতম স্পর্শও নেই। তিনি বিভিন্ন উপাদানে গঠিত কোন সত্তা নন। তাঁর সত্তাকে দ্বিখণ্ডিত করা যেতে পারে না। তার কোন আকার ও রূপ নেই। তা কোন স্থানের গণ্ডীতে আবদ্ধ নয় এবং তার মধ্যে জিনিস আবদ্ধ হতে পারে না। তাঁর কোন বর্ণ নেই। কোন অংগ-প্রত্যংগ নেই। কোন দিক নেই। তাঁর মধ্যে কোন প্রকার পরিবর্তন – বিবর্তন ঘটে না। সকল প্রকার ধরন ও প্রকরণ মুক্ত ও বিবর্জিত তিনি একমাত্র সত্তা, যা সবদিক দিয়েই আহাদ বা একক। (এপর্যায়ে একথাটি ভালোভাবে ব্যবহার করা হয় যেমনভাবে আমাদের ভাষায় আমরা "এক" শব্দটিকে ব্যবহার করে থাকি। বিপুল সংখ্যা সম্বলিত কোন সমষ্টিকেও তার সামগ্রিক সত্তাকে সামনে রেখে "ওয়াহেদ" বা "এক" বলা হয়। যেমন এক ব্যক্তি, এক জাতি, এক দেশ, এক পৃথিবী, এমন কি এক বিশ্ব – জাহানও। আবার কোন সমষ্টির প্রত্যেক অংশকেও আলাদা আলাদাভাবেও " এক" –ই বলা হয়৷ কিন্তু "আহাদ" বা একক শব্দটি আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য ব্যবহার করা হয় না। এ জন্য কুরআন মজীদে যেখানেই আল্লাহর জন্য ওয়াহেদ (এক) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে সেখানেই বলা হয়েছে : "ইলাহুন ওয়াহেদ" এক মাবুদ বা "আল্লাহুল ওয়াহেদুল কাহহার" এক আল্লাহই সবাইকে বিজিত ও পদানত করে রাখেন। কোথাও নিছক "ওয়াহেদ" বলা হয়নি। কারণ যেসব জিনিসের মধ্যে বিপুল ও বিশাল সমষ্টি রয়েছে তাদের জন্যও এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। বিপরীত পক্ষে আহাদ শব্দটি একমাত্র আল্লাহর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে৷ কারণ আল্লাহই একমাত্র সত্তা ও অস্তিত্ব যার মধ্যে কোন প্রকার একাধিক্য নেই। তাঁর একক সত্তা সবদিক দিয়েই পূর্ণাংগ।

৪। সারা বিশ্ব - জাহানে আল্লাহর সমক্ষ অথবা তাঁর সমমর্যাদ সম্পন্ন কিংবা নিজের, কর্ম ও ক্ষমতার ব্যাপারে তাঁর সমান পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে এমন কেউ কোন দিন ছিল না এবং কোন দিন হতে ও পারবে না।

সূরা ইখলাসের শিক্ষাঃ
এ সূরা অধ্যায়ন করে আমরা জানতে পারলাম আমাদের সৃষ্টি কর্তা, পালনকর্তা মহান আল্লাহ্‌ পাকের পরিচয়। আসুন আল্লাহকে আজ থেকে এভাবেই বিশ্বাস করি এবং কেউ তার পরিচয় জানতে চাইলে টিক এভাবেই তাদের কাছে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেই।