একটি বইয়ের পোস্টমর্টেমঃ সেদিনও বসন্ত ছিলো

27/03/2015 00:48

আচ্ছা একটা বই পড়ার পর যদি আপনার কুকুর হতে ইচ্ছে করে তাহলে কেমন হবে বলুন তো? হুমায়ুন আহমেদের হিমু পড়ে হিমু হতে ইচ্ছে করেনা এমন পাঠকের সংখ্যা মনে হয় একজনও খুঁজে পাওয়া যাবেনা। কেন জানেন? হুমায়ুন আহমেদ অতি যত্ন করে তাঁর হিমু থিওরি পাঠকের মনে ডুকিয়ে দেন। সকল লেখকের পক্ষে এমনটি সম্ভব নয়। যারা পারেন তারাই কেবল কালজয়ী লেখক হতে পারেন।

লেখক যদিও তাঁর লেখাকে গল্প বলেছেন তবুও এটাকে একটি সার্থক উপন্যাস বলতে আমার কোন আপক্তি নেই। বইটির নামকরনের সার্থকতায় পরে আসি। লেখক যে দিন আমাকে বইটি উপহার দিয়েছিলেন সেদিন আমার কেন জানি অদ্ভুত মনে হয়েছিল। মৌলানা মানুষ! আর যাই হোক প্রেমের গিতি কিচ্ছা নিশ্চয়ই লিখবেন না! তবে বইয়ের প্রচ্ছদ আর ভুমিকা অসাধারণ হয়েছে। ভুমিকা পড়লে বইটি আপনাকে পড়তেই হবে। ভূমিকাতে যেন কিছু একটা আছে!

আমি খুঁতখুঁতে স্বভাবের পাঠক। কোন বই শুরুতে ভাল না লাগলে বই যত বড় লেখকেরই হোকনা কেন আমি সোজা ডাসবিনে ফেলে দেব! আপনি যত বড় লেখকই হোন না কেন আমি পাঠক আপনার অখাদ্য পড়ে সময় নষ্ট করার মত সময় আমার নেই। এক্ষত্রে লেখককে আমি একশ তে একশ দেব। কারন লেখক বইটি পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি করতে পেরেছেন।

বেশির ভাগ লেখকের ক্ষেত্রে আমি একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি, গল্প একটি বিশেষ গল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। তবে এই গল্পের ক্ষেত্রে গল্পটি কোন বিশেষ গল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখানে চরিত্র গুলো বাস্তবের মতকরেই বেড়ে উঠেছে। রাজনীতি, ধর্ম, সমাজ সবকিছু যেন প্যারালাল। মানব সেবা ক্লিনিকের যে চিত্র লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন তা যেন আমাদের প্রত্যেহিক জীবনের প্রতিচ্ছবি।

পশ্চিমা সাহিত্য কিংবা আমাদের পাশের দেশ ভারতের সাহিত্যে ধর্ম একটা উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। কিন্তু কি এক অদ্ভুত কারনে আমাদের সাহিত্যে এই জিনিসটার বড়ই অভাব। অন্যদের সাহিত্যে গির্জা কিংবা মন্দির সহজে উঠে এলেও আমাদের সাহিত্যে নামাজ আযান কিংবা মসজিদের কথা লেখতে আমরা কেন যেন সংকোচ বোধ করি। সন্তান জন্ম হবার পরে আযান দেবার ব্যাপারটা উল্লেখ করে লেখক কিছুটা হলেও সেই অভাব রোধ করেছেন।

কথার ফাঁকে মোবাইল ফোনে সারা রাত বিরামহীন কথা বলার ব্যাধিটার কথাও উঠে এসেছে। উঠে এসেছে মোবাইল ফোনের আধুনিক ওয়েলকাম টিউনের কথাও। সেই সাথে একজন লোক অভিনব পদ্ধতিতে প্রতিবাদ জানাতে নির্মাণ করছে ব্লাক হাউজ! ব্যাপারটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। পছন্দ হয়েছে আরেকটা ব্যাপারও। গল্পের নায়িকা নিজের একান্ত কিছু সময় কাটানোর জন্যে তৈরি করেছে মনের মত করে একটি ঘর। যার নাম দিয়েছে শান্তি ঘর! তবে সব কিছু চাপিয়ে কুকুরের দশটি উত্তম স্বভাবের কথা  জেনে চোখ কপালে উঠে গেছে! কি সাংঘাতিক!! সাংঘাতিক বলছি কারন কেউ কোনদিন আমরা এভাবে ভেবে দেখেছি বলে মনে হয়না! আসলেই তো! আমরা যদি এই স্বভাব গুলো নিজেদের মধ্যে নিতে পারতাম!

এতক্ষণ যা বললাম এ সব কিছুই পার্শ গল্প! মূল গল্প কিছুই বলিনি। বলতে চাইও না! শুধু এতটুকু বলতে চাই গল্প পড়তে পড়তে কখন যেন চোখের দুই কোনে অশ্রু জমে গিয়েছিল বলতে পারিনা। ও হ্যা বইটির নাম বলা হয়নি। বইটির নাম সেদিনও বসন্ত ছিলো। লেখক শ্রদ্ধেয় বড় ভাই রসীদ জামীল।