আল কোরআনে বর্ণীত কিং রামিসিস দ্যা সেকেন্ড

19/10/2016 00:09

পশ্চিমাদের কাছে তিনি পরিচিত গ্রেট কিং অব ইজিপ্ট হিসাবে, মিসরীয়দের কাছে পরিচিত ১৯তম ডাইনেস্টির কিং রামিসিস দ্যা সেকেন্ড আর বাইবেল অনুসারীদের কাছে তিনি নীলনদের ভেলিতে মুসা (আঃ) কে দৌড়ানি দেওয়া কিং তবে মুসলমানদের কাছে তিনি পরিচিত শুধুমাত্র অভিশপ্ত ফেরাউন হিসাবে! মিশরে তৎকালীন সময়ের সকল রাজারা পরিচিত ছিলেন ফেরাউন হিসাবে যার বহুবচন ফারাও তবে আল কোরআনে বর্ণীত এই ফেরাউনই রামেসিস দ্যা সেকেন্ড!

রামেসিস দ্যা সেকেন্ড পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র ফেরাউন যাকে মিশরের সরকার পাসপোর্ট ইস্যু করেছে এবং পাসপোর্টে তার পেশা দেখানো হয়েছে একজন রাজা হিসাবে। শুধু তাই নয়, মিশররের কায়রো মিউজিয়ামে সংরক্ষিত তার দেহে ফাঙ্গাসের আক্রমণ হলে চিকিৎসার জন্যে যখন তাকে প্যারিসে পাঠানো হয় তখন ফ্রান্স সরকার তাকে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্মানে গ্রহন করে, বর্তমান সময়ের একজন রাষ্ট্রপ্রধানকে যেভাবে গ্রহন করা হয় ঠিক সেই ভাবেই এবং চিকিৎসা শেষে একই মর্যাদায় ফেরত পাঠায়। তবে আমাদের গল্পের শুরু ঠিক তার পর থেকেই!

লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে আমার একেবারে কম হলেও একশো বার যাওয়া হয়েছে। লন্ডনের আর কোন জায়গায় আমি এতবার যাইনি! তবে সব ভ্রমনে সব গ্যালারিতে যাওয়া না হলেও প্রতিবারই মিশরীয় গ্যালারিতে এক বারের জন্যে হলেও যাওয়া হয়। এই গ্যালারিতে রাখা মমি গুলোর প্রতি আমার অসম্ভব একটা টান আছে। আমার চোখের সমনেই মমি গুলোকে কতবার উলটপালট করা হয়েছে। এই সকেস থেকে ঐ সকেসে কিংবা এই রুম থেকে ঐ রুমে! চোখ বন্ধ করলেই এই সব দেখতে পাই! এত কিছুর পরেও রামেসিস দ্যা সেকেন্ড এর ভাস্কর্যটি আমাকে বেশি অবাক করে! কতবার যে হা করে তাকিয়ে থেকেছি তার কোন ইয়াক্তা নেই!  

রামিসিস দ্যা সেকেন্ড তখনও অতটা পরিচিত নন পৃথিবীর মানুষের কাছে। মিশরের লুক্সারের ভ্যালি অব দ্যা কিং এর KV5 থেকে চোরদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে তাকে দার আল বাহরি’র TT320 এবং পরে প্রত্নতত্ত্ববিদগন তার দেহ সেখান থেকে সংগ্রহ করে প্রদর্শনের জন্যে কায়রো মিউজিয়ামে সরক্ষন করেন।

ইয়াহুদী এবং খ্রিষ্টানদের ধর্ম গ্রন্থে তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এভাবে-

Genesis 47:11: This was the time when Joseph, through the command of Pharaoh, brought his father and siblings to the land of Egypt that was called the ‘land of Rameses.

Exodus 1: 11: The Israelites, as slaves, worked under tight taskmasters’ commands to build the treasure cities of Pharaoh, the Pithom and the Rameses.

Exodus 12:37: The people of Israel, 600,000 thousand men on foot and unknown number of children, journeyed from the place called Rameses to another place called Succoth

Numbers 33:3: This passage in the Bible pertains to the time when the Israelites from Rameses departed Egypt on the 15th day of the first month in the morning of the Passover feast.

Numbers 33:5: The removal of Israelites from an Egyptian city Rameses to Succoth.

এখানে ভাল করে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এই ধর্ম গ্রন্থ গুলোতে রামেসিস বলতে মূলত একটি শহর বা স্থানকে বুঝানো হয়েছে। সেই সাথে তার পরিণতি বা তার মৃতদেহ নিয়ে কিছু বলা হয়নি!

তবে আল কোরআনে তার সম্পর্কে বলা হয়েছে স্পষ্ট করেই-

‘আজ আমি (আল্লাহ) তোমার দেহটি রক্ষা করব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাক। আর নিশ্চয় অনেক মানুষ আমার নিদর্শনসমূহের ব্যাপারে গাফেল। (ইউনুস, ১০:৯২)

তবে এত কিছুর পরেও প্যারিসে পাঠানোর পূর্ব পর্যন্ত কেউই জানতো না এই সেই ফেরাউন! যার কথা আল্লাহ তওরাত আর আল কোরআনে বর্ণনা করেছেন।  ফ্রান্সে মমি পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পড়ে যে টিমের উপর তার প্রধান ছিলেন তৎকালীন ইউরুপের নামকরা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মরিস বুকাইলি! অন্যরা যেখানে মমি নিয়ে কাজ শেষ করে ফিরছিলেন বাসায় সেখানে সারা রাত  ল্যাবে মরিস বুকাইলি ব্যাস্ত থাক ছিলেন আরেকটা বিষয় নিয়ে! কিভাবে মৃত্যু হয়েছিল তার? এই কি সেই মমি যার কথা বাইবেলে বলা হয়েছে? সময়ের হিসাবে এটাই সেই মমি যে মুসা আঃ এর সময়ে শাসক ছিল। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই মমি ফেরত দিতে হবে কাজেই তাকে কাজ করতে হচ্ছিল সময়ের বিপরিতে।

গবেষণার ফল আসতে লাগলো দ্রুত! শরিরে লবনের পরিমান থেকে নিশ্চিত হওয়া গেল পানিতে ডুবেই মৃত্যু হয়েছে তার। আবার মমিফিকেশনের পরিক্ষা থেকে জানা গেল খুব তাড়াহুড়ো করে করা হয়েছে মমিফিকেশনের কাজ। এই থেকে তিনি সিদ্ধান্তে আসলেন মৃত্যুর পর তার দেহ বেশ পরে পানি থেকে তুলে দেহ সংরক্ষনের জন্যে অনেকটা দ্রুত মমিফিকেশন করা হয়েছে। তবে প্রশ্ন থেকে যায় আরেকটি। পানিতে তার দেহ নষ্ট হয়ে জায়নি কেন? এর মধ্যে একজন তাকে জানালেন মুসলমানরা জানে এই মমি সম্পর্কে! প্রথমে বিশ্বস না করলেও পরে জানলেন আল কোরআনে বলা হয়েছে তার সম্পর্কে! মুসলমানদের ধর্ম মতে পানিতে ডুবেই মৃত্যু হয়েছে তার। শুধু তাই নয় আল্লাহ নিজে তার দেহ সংরক্ষনের কথা বলেছেন আল কোরআনে! ব্যাস জট খুলে গেল সহজেই!

কিং রামেসিস দ্যা সেকেন্ড ছিলেন মিশরের তৎকালীন শাসকদের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ফেরাউন। তার দীর্ঘ সময়ের শাসনকালে মিশর পৃথিবীর শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি তার ক্ষমতা নিয়ে এতই অহংকারী ছিলেন যে একসময় নিজেকে লিভিং গড হিসাবে ঘোষনা করেন!

তার জন্ম ১৩০৩ খৃষ্ট পূর্বে এবং মৃত্যু ১২১৩ খৃষ্ট পূর্বে। ১২৭৯ থেকে ১২১৩ খৃষ্ট পূর্ব পর্যন্ত তিনি মিসরের শাসক ছিলেন। তিনি বেশ কিছু যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন এবং বিজয় লাভ করেন। তার সন্তান সংখ্যা ২০০ এর উপরে। তিনি এতই ক্ষমতাধর ছিলেন যে তার মৃত্যুর পরে আরও নয় জন ফারাও রাজা তার নাম উপাধি হিসাবে গ্রহন করেছিলেন। তার সময়ে মিশরে প্রচুর ভাস্কর্য এবং স্থাপত্ব নির্মাণ করা হয়েছিল যার নিদর্শন এখনও পর্যন্ত বিদ্যামন। তার মত অন্য কোন রাজা এত স্থাপত্ব নির্মাণ করেননি। এ থেকেই প্রমাণিত হয় তিনি কতটা সফল শাসক ছিলেন।  তাকে নিয়ে লেখা ইংরেজ কবি শেলি’র বিখ্যাত কয়েকটি কবিতার লাইন দিয়ে শেষ করতে চাই-

King of Kings am I, Osymandias.

If anyone would know how great I am and where I lie,

Let him surpass one of my works.