আইফেল টাওয়ারের দেশে

11/06/2012 01:46



ইউনিভার্সিটিতে হলিডে, অনেকেই নিজেদের দেশে যাচ্ছে। যারা যাচ্ছেনা তারা বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার প্লান করছে। আমার শুধু কোন প্লান নেই।

আমার হলিডেতে আমি দেশে যাচ্ছিনা শুনে আমার এক ফ্রেন্ড আমাকে জিজ্ঞেস করলো হলিডেতে অন্য কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে আছে কি না। আমার যেহেতু কাজে কোন হলিডে পাওয়ার চান্স ছিল না তাই বললাম একদম কাছে কোথাও যাওয়া যায় কিনা। পরে দুজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম ফ্রান্সের প্যারিসে যাচ্ছি। সকালে যাব আবার রাতে চলে আসব।

প্যারিসের কথা বললে সেইন নদীর কথাটাও চলে আসে অনেকটা "কান ঠানলে মাথা আসে" এর মত। মনে পড়ে যায় কবি মাইকেল মধুসূদনের কথা। এই নদীর তীরেই কবি রচনা করেছিলেন কপুতাক্ষ নদ কবিতা।


এই সেই বিখ্যাত সেইন নদী যার তীরে কবি মধুসূদন রচনা করেছিলেন কপুতাক্ষ নদ


নিচ থেকে তুলা আইফেল টাওয়ারের ছবি

প্যারিস শহরটার সাথে আমার পরিচয় ছোট বেলা থেকেই। খুব সম্ভব ষষ্ট শ্রেণীর কোন এক প্রবন্ধে প্যারিসের কথা পড়েছিলাম। শুনে ছিলাম আইফেল টাওয়ারের কথাও। লোহার তৈরি বিশাল এক টাওয়ার। মনে মনে একটা ছবিও একে রেখেছিলাম। মিলেনি বাস্তবের সাথে। বাস্তবের আইফেল টাওয়ার আরও বেশি সুন্দর আরও বেশি আকর্ষণীয়!

সবকিছু টিক করতে প্রায় পনেরও দিনের মত লেগে গেল। আমাদের গন্তব্য সেন্ট প্যাঙ্ক্রস ইন্তারন্যাসনাল স্টেশন থেকে ইউরো স্টার ট্রেনে প্যারিসের বিখ্যাত আইফেল টাওয়ার। পরে আমাদের সাথে পলিন (আমার কলিগ, ফ্রান্সের নাগরিক) ও তার দুইজন ফ্রেন্ড যোগ দিল।

ওরা আগেই বলে দিয়েছিল আমরা যেন ডিপারচারের আধা ঘণ্টা আগেই ইমিগ্রেশনের জন্যে উপস্তিত থাকি। যথারিতি টিক সময়েই ট্রেন ছাড়ল। এক সেকেন্ডও দেরি করলনা।

ট্রেন যখন সমুদ্রের নিচ দিয়ে যাচ্ছিল আমার কেমন জানি একটু একটু ভয় করছিল। পরে অবশ্য সবাই মিলে আড্ডা দেয়ার করনে তেমনটা টের পাইনি।

প্যরিসের Gare du nord international train station এ পৌছতে প্রায় ২ঘন্তা ১৬মিনিট সময় লেগে গেল। ঘড়ির কাঁটা তখন ১২টা ছুঁইছুঁই । এখান থেকে আইফেল টাওয়ারের দুরত্ব প্রায় ছয় থেকে সাত কিঃ মিঃ হবে বলে পলিন জানাল। স্টেশন থেকে বের হয়ে সামান্য খাবার খেয়ে ভাড়া করা ট্যাক্সি নিয়ে চললাম আইফেল টাওয়ার দেখতে। প্যারিস সত্যি অসাধারণ একটি জায়গা। যেদিকে তাকাচ্ছিলাম চোখ জুড়িয়ে জাচ্ছিল।

আইফেল টাওয়ারে টিকেটের লাইন দেখে চোখ কপালে উঠে গেল। পলিন এমন ভাব করল যেন তেমন কিছুই না। আমরা যেহেতু একেবারেই উপরে উঠবো তাই ১৪ ইউরো করে টিকেট নিতে হল।

এখানে আইফেল টাওয়ার সম্পর্কে একটু বলে নেয়া ভাল। এটি স্থপতি Gustave Eiffel ১৮৮৯ সালে নির্মাণ করেন যা তার নাম অনুসারে আইফেল টাওয়ার নামে পরিচিত। আইফেল টাওয়ার হচ্ছে প্যারিসের সবচেয়ে উচু স্থাপনা, যা আয়রন লেডী নামেও পরিচিত।

টাওয়ারটি ৩২০ মিটার উঁচু যা ৮১ তলা দালানের সমান। ১৯৩০ সালের পূর্ব পর্যন্ত স্থাপনাটি পৃথিবীতে মানুষের তৈরি সবচেয়ে উঁচু দালান হিসাবে পরিচিত হয়ে আসছিল। পরে New York এর Chrysler দালানটি সর্বোচ্চ দালানের খ্যতি পায়। ১৯৫৭ সালের দিকে আইফেল টাওয়ারে একটি এন্টিনা স্থাপন করলে এটি ফ্রান্সের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দালান হয়। প্রথম টি হচ্ছে Millau Viaduct.


উপরে উঠার জন্যে আমরা লিফট ব্যাবহার করলাম। অবশ্য প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় সিঁড়ি দিয়েও উঠা যায়। এত উপর থেকে প্যারিস শহর দেখতে ভীষণ মজা লাগছিল। পলিনের এটা দ্বিতীয় বার হলেও আমাদের মত বাকি দুইজনের জন্যে অভিজ্ঞতাটা ছিল প্রথম।

এবার ফিরে আসার পালা। স্থানীয় একটি শপিং মল থেকে সবাই মিলে সামান্য কেনা কাটা করে নিলাম। এখানকার জিনিস পত্রের দাম অনেকটা ইউকের মতোই।

ভীষণ ক্লান্ত সকলেই কেমন নুয়ে পড়লাম যার যার সিটে। তবে খুব মিস করছিলাম পেছনে ফেলে আসা প্যারিস শহরকে। কেন যেন মন থেকে বার বার বলছিলাম আবার দেখা হবে বন্ধু।


উপর থেকে নিচের ছবি


সুজা বেদির দিকে করে তুলা ছবি








উপর থেকে প্যারিস শহরের দৃশ্য






উপর থেকে সেইন নদীর ছবি




ইউ কের কোথাও এমন সাইন দেখিনি!!