বিলেতের পথে পথেঃ লাইট হাউজ (শেষ পর্ব)
Eddystone Lighthouse
স্কটল্যান্ডে আমি সর্বপ্রথম গিয়েছিলাম রয়্যাল ব্যাংক অব স্কটল্যান্ড আর স্কটল্যান্ড ফ্যাস্টিবল দেখার জন্যে। স্কটল্যান্ড ফেস্টিবল চলার সময়ে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। ইউ কে’র আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস, ইংল্যান্ড আর স্কটল্যান্ডের মধ্যে আমার সবচেয়ে পচন্দ স্কটল্যান্ড। পাহাড়, সমুদ্র, আর সবুজ এই তিনে মিলে স্বপ্নের এক দেশ। একবার স্কটল্যান্ড যাওয়া হল শুধু মাত্র একটি লাইট হাউজ দেখার জন্যে! bell rock lighthouse! সৈকত থেকে বেশ দূরে নর্থ সাগরে ৩৫ মিটার উচু এই লাইট হাউজ পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন সমুদ্রের পানির মধ্যে দাড়িয়ে থাকা লাইট হাউজ! সমুদ্রের এই জায়গাটা বেশ পাথুরে। আর তাই ১৮০৭ সালের দিকে রবার্ট স্টিভসন নামক একজন ইঞ্জিনিয়ার এটি নির্মাণ করেন। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে প্রায় ২০০ বছর আগে নির্মিত হলেও এখনও পর্যন্ত এর একটি ইটও মেরামত করতে হয়নি! এটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্ল্ডের সপ্তম আশ্চর্যের একটি। পূর্বে এটি চালানুর জন্যে একজন কিপার রাখা হলেও ১৯৮৮ সাল থেকে এটি অটোমেটিক করে রাখা হয়েছে।
ইংল্যান্ডের একেবারে পশ্চিম সিমান্তের ছোট্ট এক শহর, নাম cornwall । প্রায় তিন দিকেই আটলান্টিক মহা সাগর। অসম্ভব সুন্দর একটি জায়গা। ইংল্যান্ড বেড়াতে আসলে কেউ যদি cornwall না আসে তবে অনেক কিছুই মিস করবে। ইংল্যান্ডের সকল অসাধারন সুন্দর লাইট হাউজ গুলো এখানেই। Longships লাইট হাউজ তাদের একটি। ১৭৯৫ সালে নির্মিত সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের এই লাইট হাউজটির উচ্চতা ৭৯ ফিট। এখানে একটা ব্যাপার আমি নতুন দেখেছিলাম সেটা হচ্ছে এখানে কুয়াশা সম্পর্কে সতর্ক করতে Fog horn ব্যাবহার করা হয়। সৈকত থেকে দূরে হওয়ায় কাছ থেকে লাইট হাউজ দেখতে ছোট বোট নিয়ে কাছে যেতে হয়।
longship lighthouse
wolf rock lighthouse
cornwall থেকে ছোট বোট নিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের আরও ভিতরের দিকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার গেলে আছে আরও একটি লাইট হাউজ, wolf rock লাইট হাউজ। খুব কাছে থেকে লাইট হাউজটি দেখার সুযোগ হয়নি। সমুদ্রের এই অংশ আমার কাছে বেশ উত্তাল মনে হয়েছে। এর কারন নিচের প্রবালে সমুদ্রের পানির সংঘর্ষে সৃষ্ট বিশাল বিশাল ঢেউ।
এছাড়া এখানকার Eddystone লাইট হাউজ পৃথিবীর সর্বপ্রথম লাইট হাউজ যা ভুমি থেকে প্রায় ১৪ মেইল দূরে সম্পূর্ণ সমুদ্রের পানিতে নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৬৯৮ সালের দিকে Henry Winstanley এটি নির্মাণ করেন। ২৭ নভেম্বর ১৭০৩ সালে ব্রিটেনে যে প্রলয়ংকারি ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল সেই ঝড়ের রাতে Henry Winstanley সহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে সমুদ্রে ভেসে যায় লাইট হাউজটি। পরে এটি বেশ কয়েকবার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে।
St. Catherine's Oratory
ব্রিটেনের সব গুলো দ্বীপের মধ্যে আইল অব অয়াইট আমার সবচেয়ে পছন্দের। দ্বীপটিতে যাওয়া হয়েছে বেশ কয়েকবার। এই দ্বীপে বেশ কয়েকটি লাইট হাউজ আছে। তবে St. Catherine's Oratory নামক লাইট হাউজটি দেখে বেশ অবাক হয়েছিলাম। এটি দেখতে প্রচলিত কোন লাইট হাউজের মত নয়। স্থানীয় ভাবে এটি "Pepperpot" নামে পরিচিত। ১৯২৮ সালে নির্মিত চারতলা বিশিষ্ট এই লাইট হাউজটি প্রায় ১১ মিটার উচু।
needles lighthouse
আইল অব ওয়াইটে যারা বেড়াতে যাবেন তাদেরকে আমি দুইটা যায়গায় অবশ্যই যেতে বলব তার একটি ডাইনোসরস আইল্যান্ড আর অন্যটি নিডলস। এখানে needles lighthouse নামে একটি বাতিঘর আছে যা পর্যটকদের নজর কাঁড়ে সহজেই। প্রায় ১০৯ ফুট উচ্চতার এই লাইট হাউজটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৮৫৯ সালের দিকে। পরে ১৯৮৫ সালে এর উপরে একটি হেলিপ্যাড স্থাপন করা হয় এবং ১৯৯৪ সাল থেকে এটি অটোমেটিক করে রাখা হয়েছে।
সবশেষে এটাই বলব, আমার দেখা লাইট হাউজ গুলোর পরেও ব্রিটেনে শতাদিক লাইট হাউজ আছে। আছে আরও সুন্দর আর অবাক হয়ে থাকিয়ে থাকার মত লাইট হাউজ। ব্রিটেনে বেড়াতে আসলে অবশ্যই লাইট হাউজ না দেখে যাবেন না।
বিলেতের পথে পথেঃ লাইট হাউজ (পর্ব- ১)
বিলেতের পথে পথেঃ লাইট হাউজ (পর্ব- ২)