বিলেতের পথে পথেঃ লাইট হাউজ (পর্ব-১)

12/12/2014 16:25

ব্রিটেনের চারদিকেই সমুদ্র হওয়ায় এদেশে প্রচুর লাইট হাউজ দেখতে পাওয়া যায়। আপনি সমুদ্র সৈকতের বেশির ভাগ শহরে গেলেই আশে পাশে অন্তত একটি লাইট হাউজ পাবেন। আমি এখানকার যে কোন শহরে বেড়াতে গেলে প্রথমেই কি কি দেখব তার একটা লিস্ট করি নেট ঘাটাঘাটি করে। সেই ঘাটাঘাটির সময়ে লাইট হাউজের খোঁজ অবশ্যই করি। অনেক গুলো লাইট হাউজ দেখা হয়েছে। পোর্টস মাউথ, প্লে মাউথ, সাউথামটন, আইল অব ওয়াইট, ইষ্টবোর্ণ, দাঞ্জেনিস, ফউকস্টোন, ডোবার আরও অনেক যায়গায়। তবে আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আপনি যদি এই দেশে বেড়াতে এসে অল্প সময়ে সেরা সেরা লাইট হাউজ গুলো দেখতে চান তবে আপনাকে কর্ণ ওয়াল আসতে হবে। কারন বিলেতের টপ লিস্টেড লাইট হাউজের বেশির ভাগই এই এলাকায় অবস্তিত।

লাইট হাউজ শব্দটার সাথে সেই ছেলে বেলা থেকেই পরিচিত। কিভাবে পরিচিত সেটা এখন আর মনে নেই। তবে অনেক গুলো কারনে বড় বেলাতে এসে এই শব্দটা মনে দাগ কেটে ছিল। আহসান হাবিব ইমরোজ ভাইয়ের একটা স্কুল ছিল, লাইট হাউজ। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। আহসান হাবিব ইমরোজ ভাইকে পরিচয় করে দেবার কিছু নেই। অসাধারন একজন মানুষ। মোরা বড় হতে চাই’র লেখক। যারা পড়েননি তারা পড়ে দেখতে পারেন। বর্তমানে তার নামের সামনে ডঃ লেগেছে।

আরেকজন মানুষ আছেন। মাহমুদূর রাহমান। যাকে অনেকেই সাহসের বাতি ঘর বলেন। আমি তার এই নামের পেছনে ভুলের কিছু দেখিনা। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই দুইজনকেই বর্তমান সরকার দ্বারা লাঞ্চিত, অপমানিত এবং কারা রুদ্ধ হতে হয়েছে। এরা দুইজনই সমাজ বদলে দেবার স্বপ্ন দেখেছিলন।তবে কি লাইট হাউজ, সমাজ বদলে দেওয়া কিংবা শাসক গোষ্ঠী দ্বারা নির্যাতিত হওয়া একই সুত্রে গাঁতা? 

 Belle Tout lighthouse

নাহ্‌। সেরকম কিছু নয়। লাইট হাউজ হচ্ছে সমুদ্র সৈকতে মিনারের মত করে নির্মিত এক ধরনের বাতিঘর যা থেকে দূর সমুদ্রে আলো ফেলা হয় যাতে রাতের আধারে জাহাজ তার গতি পথ না হারিয়ে সঠিক ভাবে চলতে পারে। তাছাড়া যেসকল সৈকতে প্রচুর প্রবাল রয়েছে কিংবা ও গভীর সৈকত সম্পর্কে জাহাজের নাবিককে সতর্ক করে দিতে এ ধরনের লাইট হাউজ ব্যাবহার করা হয়।   

ব্রাইটনে থাকাকালীন সময়ে আমি আর মুস্তাফিজ ভাই প্রায়ই সাইকেল নিয়ে বিকালে এদিক সেদিক বের হতাম। তখনও বাস্তবের লাইট হাউজের সাথে আমি পরিচিত নই। ব্রাইটনে সাইকেল চালানো সহজ ছিল কারন সমুদ্রের সৈকত ধরে সাইকেল চালানো যেত। আমরা অনেক দূর পর্যন্ত সাইকেল নিয়ে চলে যেতাম। এভাবেই একদিন পরিচয় হল বাস্তবের লাইট হাউজের সাথে। সমুদ্র সৈকতে বেশ উচু অনেকটা মিনারের মত একটা খাম্বা। জানতে পারলাম এটাই সেই লাইট হাউজ বা বাতিঘর! প্রথম যেদিন বাস্তবে দেখলাম অনেক ক্ষন থাকিয়ে থাকলাম। অসাধারন!

 Beachy Head Lighthouse

জায়গাটার নাম বিচি হেড, ইষ্ট সাসেক্সের ইষ্টবোর্ণ শহরের কাছেই। এখানে দুটি লাইট হাউজ আছে। একটা ক্লিফের উপরে আর আরেকটা ক্লিফের নিচে সি লেভেলে। Beachy Head Lighthouse টি সি লেভেলে যেটি ১৯০২ সালের দিকে চালু করা হয় এবং ক্লিফের উপরেরটির নাম Belle Tout lighthouse যেটি ১৬৬১ সালের দিকে চালু করা হয় ইংলিশ চ্যানেলের জাহাজ এবং মাছ ধরার নৌকাকে রাতে এবং অস্বাভাবিক আবহাওয়ায় পথ দেখানুর নিমিক্তে। এসব লাইট হাউজের লাইটের ফ্লাস প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার দূর থেকে দেখা যায়! আর এরা প্রতি বিশ সেকেন্ডে একবার ফ্লাস করে। পূর্বে এগুলো চালানোর জন্যে কিপার রাখা হলেও বর্তমানে এগুলো অটো করে রাখা হয়েছে।

ভয়ংকর সুন্দর একটা জায়গা। প্রথম দেখলাম আর প্রেমে পড়ে গেলাম। এটিই ব্রিটেনের সমুদ্র পিষ্ট থেকে সবচেয়ে উচু হোয়াইট ক্লিফ! তবে জায়গাটা বিখ্যাত অন্য আরেকটা কারনে। এটি পৃথিবীর অন্যতম সুইসাইড স্পট। একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায় প্রতি বছর গড়ে ২০ জন মানুষ এখানে আত্মহত্যা করে। তবে অদ্ভুত ব্যাপার এদের বেশির ভাগ লোক অন্য কোন শহর থেকে আসে আত্মহত্যা করার জন্যে। এখানে বাস স্টপের পাশে একটা সাইন বোর্ড দেখে মজা পেলাম। সাইন বোর্ডে কেউ আত্মহত্যা করতে পারে এমন সন্দেহ হলে দ্রুত বিশেষ নাম্বারে ফোন দিতে অনুরুধ করা হয়েছে। এখানে অফ টপিক একটা কথা বলে নেই, ব্রাইটনের হোব এলাকায় এরকম একটা রাস্তা দেখেছিলাম যেখানে পুলিশের একটা সাইন বোর্ডে লিখা ছিল “এখানে চুরি ডাকাতি বেশি হয়, দ্রুতচলুন”! আমার মনে হয় আমাদের দেশে এরকম করা গেলে অপরাধ অনেকটা কমে আসত। আগের কথায় ফিরে আসি। জায়গাটা নিয়ে আমার একটা অভিজ্ঞতার কথা না বলে পারছিনা। আমি যতবার জায়গাটাতে গেছি ততবারই মনে হয়েছে লাফ দেই। কেন এমন মনে হয়েছে তা হয়ত মনো বিজ্ঞানিরা বলতে পারবেন। 

বিলেতের পথে পথেঃ লাইট হাউজ (পর্ব-২)